বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন আজ। এই নির্বাচন নিয়ে অবশ্য কম নাটক হয়নি। এখন পর্যন্ত তামিম ইকবালসহ অন্তত ২০ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে তফসিল ও সময় পেছানোর দাবিও আসছে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আজ অনুষ্ঠিত হবে বিসিবির নির্বাচন। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তার আগে গতকাল মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ সেজেছে বড় বড় সব পোস্টারে। বিসিবিতে নির্বাচনী আবহ বোঝাতেই প্রার্থীদের এই আয়োজন। বিসিবির অফিস ভবনের দেয়ালে বড় করে সব প্রার্থীদের ছবি টানানো হয়েছে। যেখানে ফারুক আহমেদ, ইসতিয়াক সাদেকসহ অন্যান্য প্রার্থীদের ছবি রয়েছে। এদিকে, নির্বাচনের একেবারে সন্নিকটে থাকলেও যেমন আমেজ থাকার কথা, সেরকমটা নেই বিসিবিতে। কারণ বিসিবির নির্বাচন থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী।বড় প্রার্থীরা না থাকায় সভাপতি পদ নিয়ে রোমাঞ্চ অনেকটাই কমেছে। এ ছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সহ-সভাপতি কারা হচ্ছেন সেটা নিয়েও তেমন নাটকীয়তার সুযোগ কম। ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের আশা ছিল এবারের বিসিবি নির্বাচন হবে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তবে তামিম ইকবালসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় অনেকটাই জৌলুস হারিয়েছে আসন্ন এই নির্বাচন। সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন আরও ১৫ জন প্রার্থী। গতকাল পর্যন্ত সবমিলিয়ে বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জন। জামালপুর জেলা থেকে কাউন্সিলর হয়ে ঢাকা বিভাগে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান। তবে নির্বাচনের আগেরদিন গতকাল তিনিও সরে দাঁড়ালেন। এমন অবস্থায় ঢাকা বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বিসিবি সভাপতি বুলবুল জানালেন, দেশের ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন পৃথিবীর সেরা ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন, ‘আমার কাছে মনে হয় আমাদের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন পৃথিবীর সেরা ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন এবং এই নির্বাচনটা এমন একটা জায়গায় দেখা গিয়েছে যে, যেদিন বাংলাদেশ দুটো ম্যাচ, ছেলেদের ম্যাচও জিতেছে, টি-টোয়েন্টি আফগানিস্তানের সাথে, মেয়েদের দলও বিশ্বকাপে জিতেছে। কিন্তু আসল নিউজ হয়েছে নির্বাচনকে ঘিরে।’ বুলবুলের আশা দেশের খেলা সব জেলাগুলোতে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। এ প্রসঙ্গে বুলবুল গতকাল বলেন,‘আমরা যদি সত্যিই ক্রিকেট উন্নয়ন করতে পারি এই ঢাকার ১৭টা জেলা আছে। একটা জেলা হচ্ছে কিশোরগঞ্জ এবং সেখানে ক্রিকেট বোর্ডের ভোট চাইতে গিয়ে দেখলাম যে তারা যেভাবে ক্রিকেট নিয়ে এগোচ্ছে, তাদের যে স্বপ্ন, তাদের যে পরিকল্পনা, এটা যদি আর ১৬টা জেলায় আমরা ছড়িয়ে দিতে পারি, পরবর্তীতে ৬৪টা জেলায় ছড়িয়ে দিতে পারি, আমাদের ক্রিকেটের স্ট্রেংথ আমরা এখনও জানিই না।’ এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন বর্জনে গতকাল সর্বশেষ যোগ হয়েছে আরও একটি নাম। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জামালপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হিসেবে ঢাকা বিভাগের পরিচালক পদপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান। ১ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন থাকলেও এরপর এ নিয়ে চারজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। রেদুয়ানের আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ক্যাটাগরি-২-এ লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের কাউন্সিলর লুতফর রহমান ও কাঁঠালবাগান গ্রিনক্রিসেন্টের মেজর ইমরোজ এবং রাজশাহী বিভাগের পরিচালক প্রার্থী হাসিবুল আলম। তবে নির্ধারিত দিনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় আজ পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের ব্যালট পেপারে তাঁদের নাম থাকবে। গতকাল বিকেলে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ‘রাতের ভোট’কেও হার মানিয়েছে এবারের বিসিবি নির্বাচন। তিনি বলেন, ‘রাতের ভোট তো...তবু তো ওরা ব্যালট বাক্স ভরেছে, সেটা আলাদা জিনিস। এরা তো সুকৌশলে এমন কাজ করছে, সেটা (রাতের) ব্যালট বাক্সকেও হার মানিয়ে ফেলছে।’ ঢাকা বিভাগ থেকে পরিচালক হওয়ার দৌড়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন। রেদুয়ান সরে দাঁড়ানোয় আমিনুল ও নাজমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন। যদিও ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে আমিনুলের ও ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে নাজমূলের কাউন্সিলর হওয়া নিয়ে আপত্তি আছে রেদুয়ানের। তাঁর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট এলাকায় ক্রিকেটীয় কোনো কার্যক্রমে না থেকেও শেষ মুহূর্তে বিসিবি নির্বাচনের জন্যই অ্যাডহক কমিটির সদস্য হয়েছেন এই দুজন। এদিকে মেজর (অব.) ইমরোজ ও লুতফর রহমান বাদলের সরে দাঁড়ানো এবং আর দুই প্রার্থীর সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তে ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগেই নিশ্চিত হয়েছে বিসিবির নতুন বোর্ডের সম্ভাব্য ১২ পরিচালকের নাম। ১২ পরিচালক হতে পারেন ইসতিয়াক সাদেক (ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব), আদনান রহমান দীপন (রূপগঞ্জ টাইগার্স), ফায়াজুর রহমান মিতু (উত্তরা ক্রিকেট ক্লাব), আবুল বাশার (প্রাইম ধলেশ্বর), আমজাদ হোসেন (ঢাকা স্পারটান্স), শানিয়ান তানিম নাভিন (ঢাকা মেরিনার ইয়াংস), মো. মোখছেদুল কামাল (গোল্ডেন ঈগলস), মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান ভূঁইয়া (ভিক্টোরিয়া এসসি), এম নাজমুল ইসলাম (ট্যালেন্ট হান্ট), ফারুক আহমেদ (রেঞ্জার্স ক্রিকেট), মো. মনজুর আলম (রেগুলার স্পোর্টিং ক্লাব) ও মেহরাব আলম চৌধুরী (যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্র)।
তবে গতকাল চেম্বার আদলত ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ বৈধতা দিয়েছেন। যে কারণে তাদের নির্বাচন করতে কোনো আইনি বাধা নেই। ১৫ ক্লাবের মধ্যে ভাইকিংস থেকে কাউন্সিলর ছিলেন ইফতেখার রহমান মিঠুও। নির্বাচনের একদিন আগে বৈধতা পেয়ে জানালেন তিনিও বোর্ড পরিচালকের জন্য নির্বাচন করবেন।
এদিকে কাটাগরি ১ (বিভাগ-জেলা) থেকে বোর্ড পরিচালক হতে যাচ্ছেন যারা-
খুলনা- আব্দুর রাজ্জাক রাজ, জুলফিকার আলি খান।
চট্টগ্রাম- আহসান ইকবাল চৌধুরি, আসিফ আকবর
ঢাকা- আমিনুল ইসলাম বুলবুল, নাজমুল আবেদিন ফাহিম।
সিলেট- রাহাত শামস
বরিশাল- শাখাওয়াত হোসেন
বাকি দু-জন হবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ থেকে।
এদিকে ক্যাটাগরি ৩ থেকে লড়াই করবেন খালেদ মাসুদ পাইলট এবং দেবব্রত পাল। যেখানে ভালো একটা লড়াইয়ের আবাহাওয়া দেখছেন সবাই।