এশিয়া কাপ ও নেদারল্যান্ডস সিরিজকে সামনে রেখে ক্রিকেটারদের নিয়ে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট চলছে ফিটনেস ক্যাম্প। সেই সাথে বিসিবির স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেলি ক্রিকেটারকে নিয়ে ছুটে চলেছেন জিম, মাঠ আর পল্টনের জাতীয় স্টেডিয়ামে। তার একটাই লক্ষ্যÑক্রিকেটারদের ফিটনেসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে ফিটনেস ক্যাম্প। এরপর শুরু হবে স্কিল ট্রেনিং। ২০ আগস্ট থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে প্রস্তুতি ক্যাম্প। সেখানেই ৩০ আগস্ট, ১ ও ৩ সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এরপর দল উড়াল দেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, যেখানে ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হবে এশিয়া কাপ। আবুধাবিতে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ১১ সেপ্টেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে। এরআগে গুলিস্তান জাতীয় স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস টার্ফে ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। রোববার জাতীয় দলের স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ নাথান কেডির অধীনে ফিটনেস টেস্ট দেন নাহিদ রানা-তাসকিন আহমেদরা। গতকাল মিরপুরে ফিটনেস ট্রেনিং শেষে ট্রেনার নাথান কেলি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা সারা বছর ক্রিকেট খেলি। অন্য দেশগুলোর মতো বড় বিরতির সুযোগ আমাদের নেই। তাই সিরিজ শেষের এই ফাঁকা সময়টাই কাজে লাগাই। এবারও সেটাই করেছি। বিরতিতে উন্নতির সুযোগ থাকে বেশি। কেউ টাইম ট্রায়ালে ভালো করতে পারেনি, কিন্তু জিম সেশনে দুর্দান্ত করেছে। ফিটনেস ক্যাম্প মানে শুধু পাস বা ফেল নয়; বরং কার কোথায় ঘাটতি, কে কেমন কাজ করলে উন্নতি করবে- এসব চিহ্নিত করাই মূল লক্ষ্য। খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত শক্তি ও দুর্বলতা বুঝে তাদের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করি।’ আগে বিপ টেস্ট হলেও গত কিছুদিন ধরে টাইম ট্রায়ালের মাধ্যমে ফিটনেস যাচাই করা হচ্ছে। ‘টাইম ট্রায়াল’কে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে কেলি বলেছেন, ‘এটার ফল নিয়ে কম বিতর্ক হয়। যখন আপনি ইয়ো-ইয়ো বা বিপ টেস্ট করান, কখনও কখনও খেলোয়াড়েরা খুব অল্পের জন্য পিছিয়ে যায়, কিন্তু তখন তাদের থামিয়ে দিয়ে বলাটা কঠিন হয়ে যায় যে তোমার টেস্ট শেষ। টাইম ট্রায়ালের ভালো জিনিস হচ্ছে, ঘড়ি মিথ্যা কথা বলে না। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যারা ইয়ো ইয়ো বা বিপ টেস্টে পাস করে, তারা টাইম ট্রায়ালেও জেতে। যারা ওখানে (বিপ বা ইয়ো ইয়ো) ভালো না, তারা এখানেও (টাইম ট্রায়াল) না।’ এরআগে রবিবার ঢাকা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের প্রাথমিক স্কোয়াডের সদস্য ছাড়াও টেস্ট পুলের কয়েকজন ক্রিকেটার অংশ নেন ফিটনেস পরীক্ষায়। ১৬০০ মিটার দৌড়ে সবচেয়ে ভালো করেন তরুণ পেসার নাহিদ রানা। তার পরে ছিলেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব, যিনি সময় নিয়েছেন ৫ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড। বড় কোনও সিরিজ বা টুর্নামেন্টের আগে ক্রিকেটারদের শারীরিক অবস্থা বোঝার জন্য ৪০০ মিটারের ট্র্যাকে চার চক্করের দৌড় প্রতিযোগিতা চালু করা হয়েছে। দুই ক্রিকেটারের প্রশংসায় কেলি বলেছেন, ‘আমরা জাতীয় স্টেডিয়ামে কিছু টেস্ট করেছি। স্প্রিন্ট টেস্ট এবং টাইম ট্রায়াল করেছিলাম। টাইম ট্রায়ালে মনে হয় ১২ জন খেলোয়াড়ের পার্সোনাল বেস্ট পেয়েছি।
অনেক খেলোয়াড়ই এই জায়গায় উন্নতি করছে। নাহিদ অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। ৫ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে ১৬০০ মিটার দৌড় শেষ করেছে। আর পুরো দল একসাথে এই দিকটা উন্নতি করার চেষ্টা করছে। আমরা এখানে কিছু স্ট্রেংথ টেস্টও করেছি। সবগুলো স্ট্রেংথ টেস্ট একসাথে মিলিয়ে ৫৬টি পার্সোনাল বেস্ট পেয়েছি।’ ফিটনেস টেস্টে নিজেদের শতভাগ নিংড়ে দিচ্ছেন উল্লেখ করে কেলি আরও বলেছেন, ‘ক্রিকেটাররা খুব মোটিভেটেড। ওরা সবাই প্রচণ্ড পরিশ্রমী এবং নিজেদের সেরা বানাতে চায়। আমি কখনও আমাদের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ফিটনেস নিয়ে অভিযোগ পাইনি। তারা পুরোপুরি যুক্ত হয়েছে, উন্নতির চেষ্টা করছে এবং তাদের এনার্জি ও উৎসাহ দারুণ।’
কেডি আরো জানান, ক্রিকেটারদের ফ্টিনেস টেস্ট নতুন কিছু নয়। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকেই নিয়মিত এই টেস্ট চলছে। যাতে টাইম ট্রায়াল, শক্তি পরীক্ষা ও স্প্রিন্ট টেস্ট থাকছে। বিশেষ করে তরুণ খেলোয়াড়, যারা টি-টোয়েন্টি ও একদিনের ক্রিকেট খেলছে; শুধু ক্রিকেট দক্ষতা নয়, অ্যাথলেট হিসেবে নিজেদের উন্নত করতেও মনোযোগী তারা। খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কোচ বলেন, সূচিতে বিরতি থাকলেও খেলোয়াড়রা শারীরিক অনুশীলনে দায়িত্বশীল। বরং তারা সিরিজ শেষে আরও বেশি অনুশীলন করেছে। লম্বা সিরিজ চলাকালে অতিরিক্ত অনুশীলনের সুযোগ কম থাকে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে খেলোয়াড়রা নিজেদের ক্যাম্পে থেকে নিয়মিত জিম, দৌড় ও কঠোর পরিশ্রম করেছেন।