শ্রীলংকার বিপক্ষে বড় হারে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। অথচ সিরিজে জয় দিয়েই শুরু করতে পারত টাইগাররা। আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকাকে ২৪৪ রানে আটকে দিয়েছিল টাইগার বোলাররা। কিন্তু ব্যাটারদের চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে প্রথম ম্যাচেই ৭৭ রানে হারে বাংলাদেশ দল। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের শুরুর দিকের ব্যাটিংটা দেখে মনে হয়েছিল ম্যাচটি জিতেই নিয়েছে মিরাজরা। কিন্তু এরপর যা হলো তা দেখলে দেশের ক্রিকেটের যেকোনো ভক্ত আঁতকে উঠবেন। প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে মাত্র ২৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। জবাবে বাংলাদেশ ১ উইকেটেই ১০০ রান করে ফেলেছিল। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ হারের কথা চিন্তাই করতে পারে না। কিন্তু সেই ম্যাচে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত ১৬৭ রানে অলআউট হয়ে বাজেভাবে হারের আরও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো লাল-সবুজবাহিনী। আর ৭৭ রানের জয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল শ্রীলংকা। অবশ্য ২৪৫ রানের লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশ শুরুটা দারুণ করে। প্রথম ওভারে পারভেজ হোসেন ইমন টানা দুটি চার মারেন। ওয়ানডেতে অভিষেক ম্যাচ রাঙাতে পারেননি বাংলাদেশ ওপেনার। ১৩ রান করে থামেন তিনি। ২৯ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর তানজিদের হাফ সেঞ্চুরি ও নাজমুল হোসেন শান্তর প্রতিরোধে বাংলাদেশ যেন জয় দেখতে পাচ্ছিল। ১ উইকেট হারিয়ে যে তাদের স্কোরবোর্ডে রান ৯৯। চমৎকার অবস্থানে থাকার পর হঠাৎ করে এলোমেলো বাংলাদেশ, যার শুরুটা হয়েছিল শান্তর রান আউটে। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে তিনি দুই সেন্টিমিটার দূরে থাকতে মিলান রত্নায়েকের থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন কুশল মেন্ডিস। ১০০ রানে পড়ে ২ উইকেট। পরের ওভারের ঘটনা। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা বল হাতে নিয়েই ধসের সূচনা করলেন। ১৮তম ওভারে লিটন দাস ও তানজিদকে ফেরান লঙ্কান স্পিনার। পরের ওভারে কামিন্দু মেন্ডিস ফেরান তাওহীদ হৃদয়কে। ১০৩ রানে দলের অর্ধেক ব্যাটারের বিদায়ের পর হাল ধরতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়ানডের নতুন অধিনায়ক ডাক মারেন হাসারাঙ্গার বলে। পরের ওভারে কামিন্দু জোড়া আঘাতে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব ও তাসকিন আহমেদকে। মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম উইকেট হারায় বাংলাদেশ ওয়ানডেতে সবচেয়ে বড় ধস। এর আগে ২০২০ সালে নেপালের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ৮ রানে এমন ধস দেখেছিল। ১ উইকেটে ২৩ রান করা আমেরিকা ৩১ রানে হারায় ৮ উইকেট। ৩৫ রানে বোল্ড হয় তারা। এই হারের কারণ হিসেবে মিডল অর্ডারদের দুষছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি বলেন, ‘প্রথম ৮ ওভারে আমরা খুব ভালো খেলেছি। শান্ত (নাজমুল হোসেন শান্ত) এবং তানজিদ (তানজিদ তামিম) দারুণ ব্যাট করেছে। কিন্তু মিডলঅর্ডার ব্যাটাররা ভালো খেলতে পারেনি। টানা উইকেট হারানোই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে।’ টস গুরুত্বপূর্ণ ছিল কি না- এই প্রশ্নে মিরাজ বলেন, ‘অবশ্যই। উইকেট খুব ভালো ছিল, আমরা দারুণ বল করেছি, বিশেষ করে ফাস্ট বোলাররা, শুরুতেই উইকেট তুলে নিয়েছে। তবে মাঝের ওভারগুলোতে আমরা উইকেট পাইনি। আসালাঙ্কার যেভাবে খেলেছে, তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে- অসাধারণ ইনিংস ছিল। যদি মাঝের ওভারগুলোতে আমরা উইকেট পেতাম, তাহলে ম্যাচে ফিরতে পারতাম। আবহাওয়াটা খুবই গরম।’ মোস্তাফিজুর রহমান ও তানভীর ইসলামের ইনজুরি নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমাদের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ বোলার, মোস্তাফিজ এবং তানভীর ক্র্যাম্পে ভুগেছে।’ অবশ্য এমন হারের পর অবশ্য অধিনায়কের জন্য ব্যাখা দেয়াটা খুবই কঠিন ছিল। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মিরাজ বলেন, 'উইকেট ভালো ছিল, আমি মনে করি আমরা ভালো বল করেছি বিশেষ করে পেস বোলাররা। মাঝের ওভারে অবশ্য আমরা উইকেট তুলতে পারিনি। আমাদের দুইজন বোলারের পায়ে সমস্যা হয়েছিল।' 'তবে আসালাঙ্কাকে ক্রেডিট দিতে হবে। তামিম শান্ত ভালো শুরু করেছিল আমাদের। যদিও শান্তর আউটটা একটা ভুল ছিল। মিডল অর্ডার ভালো করতে পারেনি। দ্রুত উইকেট হারানোর কারণে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের ছোট ছোট জুটি দরকার ছিল, আমাদের সুযোগ ছিল তবে সেটা ধরতে পারিনি।'-যোগ করেন তিনি। আগামী ৫ জুলাই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই দল। ম্যাচটি এখন বাংলাদেশের জন্য একরকম ফাইনাল। কারণ ম্যাচটিতে হারলেই হাতছাড়া হবে সিরিজ।
ক্রিকেট
টানা উইকেট হারানোই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে---------মিরাজ
শ্রীলংকার বিপক্ষে বড় হারে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। অথচ সিরিজে জয় দিয়েই শুরু করতে পারত টাইগাররা। আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকাকে ২৪৪ রানে আটকে দিয়েছিল টাইগার বোলাররা।