এক টেস্টে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেও ম্যাচ জিততে পারেনি ভারত। হেডিংলিতে পাঁচ দিনের লড়াই শেষে জিতেছে ইংল্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এমন পরিণতি কখনোই দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। প্রথম টেস্টে ভারতের দেয়া ৩৭১ রানের লক্ষ্য অনায়াসেই টপকে গিয়ে ৫ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড। এই জয়ের মাধ্যমে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বেন স্টোকসের দল। ভারতের ব্যাটিং দুর্দান্ত হলেও ম্যাচ জিততে পারেনি তারা। প্রথম ইনিংসে যশস্বী জয়সওয়াল (১০১), শুভমান গিল (১৪৭), ও ঋষভ পন্ত (১৩৪) সেঞ্চুরি করেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও রানে ফেরেন কেএল রাহুল (১৩৭) ও ঋষভ পন্ত (১১৮)। অর্থাৎ, ভারতের ব্যাটাররা মোট ৫টি সেঞ্চুরি করেও হারের মুখ দেখল-টেস্ট ইতিহাসে যা বিরলতম ঘটনা। টেস্ট ইতিহাসে এর আগে কেবল একবারÑ১৯২৮ সালে মেলবোর্নেÑএকটি দল (অস্ট্রেলিয়া) ৪টি সেঞ্চুরি করেও হেরেছিল। এবার সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেল ভারত।

জয়ের জন্য শেষ দিনে ৩৫০ রানের প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। দারুণ ব্যাটিং করেন বেন ডাকেট (১৪৯), জ্যাক ক্রলি (৬৫), জো রুট ও জেমি স্মিথ। মাত্র ৮২ ওভারেই ৩৭৩ রান তুলে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় স্বাগতিকরা। ভারতের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের ৫ম দিনে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫০ রান। প্রতি সেশনে ১০০ এর বেশি রান দরকার ছিল। তবে ইংল্যান্ড দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে পুরোটা দিন জুড়ে। ৮২ ওভারের মাথায় বের করে এনেছে ম্যাচটা। আরও একবার হেডিংলি জানান দিলো, টেস্টই ক্রিকেটের আসল সৌন্দর্য্য। যদি কেউ ফলাফল বের করে আনতে চায়, তবে বনেদি ঘরানার এই ম্যাচেই মিশে থাকে ক্রিকেটের মূল রোমাঞ্চ। ইংল্যান্ড দিনের শুরু থেকেই খেলেছে ম্যাচ বের করে আনার তাগিদে। আগের দিনেই জশ টাং বলেছিলেন তার দল ম্যাচে ফল আনার জন্যই খেলবে। বোলার টাংয়ের সেই কথা রেখেছেন দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি এবং বেন ডাকেট। রেকর্ড গড়া ১৮৮ রানের পার্টনার এসেছে দুই ওপেনারের সুবাদে। এটি ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ। পেছনে পড়েছে ১৯৫৩ সালে ত্রিনিদাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৪২ রানের অপরাজিত জুটিটা। জ্যাক ক্রলি এদিন সেঞ্চুরি পাননি। প্রাসিধ কৃষ্ণা প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তাকে। আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান অলি পোপও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ৮ বলে ৮ রান করেই ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। এরপর ক্রিজে আসেন টেস্টের নাম্বার ওয়ান ব্যাটার জো রুট। শুরুতে কিছুটা নড়বড়ে থাকলেও ধীরে ধীরে নিজেকে ক্রিজে থিতু করেছেন। সুযোগ পেলেই বলকে করেছেন সীমানাছাড়া। অপরপাশে বেন ডাকেট অবশ্য ছুটছিলেন তখন। সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চের রেকর্ডও করেছেন। আগে যেটা ছিল জো রুটের (১৪২*) দখলে। সেটাকেই ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি। যদিঅ দুর্ভাগ্য বলতে হবে তার। ড্যাডি সেঞ্চুরি মিস করে যান ১ রানের জন্য। শার্দুল ঠাকুরের বলে যখন আউট হয়েছেন, তখন তার স্কোর ১৪৯। এরপরের বলেই ফিরে যান হ্যারি ব্রুকও। ভারত তখন ম্যাচে কিছুটা ফেরার আভাস দিয়েছিল বটে। তবে বেন স্টোকস তো আছেনই। জো রুটের সঙ্গে ইংলিশ অধিনায়কের ৭৭ বলে ৪৯ রানের জুটি হারের শঙ্কাটাই উড়িয়ে দেয় ইংলিশদের মধ্যে থেকে। রবীন্দ্র জাদেজার বলে রিভার্স সুইপে টাইমিং ভুল করার আগে এদিন দারুণ ছন্দে ছিলেন স্টোকস। তার আউটের পর ইংল্যান্ডের জন্য শঙ্কা ছিল কেবল বৃষ্টি। জেমি স্মিথ শুরু থেকেই ছিলেন আত্মবিশ্বাসী আর জো রুট তখনও ক্রিজ আগলে রেখেছেন।