বিপিএল বিতর্কসহ নানা কারণে আলোচনায় দেশের ক্রিকেট। এসব সমস্যা সমাধানে পরামর্শ নিতে হঠাৎ করেই জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সোমবার দুপুরে বিসিবি কার্যালয়ে হয় বৈঠক। তাতে সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন, শাহরিয়ার নাফিস, মোহাম্মদ আশরাফুল, রাজিন সালেহ থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ, লিটন দাসও উপস্থিত ছিলেন। সাবেক অধিনায়কদের এই বৈঠকে কয়েকজন জুমেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। অনেকটাই অনুমেয়, সাকিব-মাশরাফি-দুর্জয় তিনজনই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদ সদস্য ছিলেন। যে কারণে তারা আমন্ত্রণ পাননি।

ঠিক কী নিয়ে আলোচনা হলো তা নিয়ে গণমাধ্যমের আগ্রহ ছিল অনেক। বৈঠক শেষে হাবিবুল বাশার সুমন জানিয়েছেন, ‘বিপিএলসহ ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভিন্ন টুর্নামেন্টসহ জাতীয় দলের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় দলের অধিনায়কদের চিন্তাভাবনা কী, কীভাবে দেশের ক্রিকেটের উন্নতি করা যায়, কোন কোন জায়গায় ঘাটতি আছে; সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, চা-চক্রের ফাঁকে ক্যাপ্টেনস থটগুলো জানতে চেয়েছেন বিসিবি সভাপতি।’

নতুন প্রজন্মের দুই অধিনায়ক মুমিনুল ও লিটনের বৈঠকে থাকা নিয়ে হাবিবুল বাশার বলেছেন, ‘সাবেক অধিনায়কদের মতামত নেয়া হয়েছে। লিটন-মুমিনুলের মতো এই প্রজন্মের দুই অধিনায়কের ভাবনাও শোনা হয়েছে। তারা এই সময়ের ক্রিকেট সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন, তাদের ভাবনা শেয়ার করেছেন। সবমিলিয়ে দারুণ আলোচনা হয়েছে।’ বৈঠকে ছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিমও। তিনি স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে জানান বৈঠকের গুরুত্ব কতখানি, ‘মিটিং বলতে কিছুটা মতবিনিময় আলাপ করেছি। বিপিএলটা হয়ে গেলো, সেটা নিয়ে আলাপ করেছি। সামনের বছরে খেলাটা কীভাবে সাজাতে পারি, তাদের মতামত কী... আগের অধিনায়করা ছিলেন, তার চেয়েও ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো আমাদের যে কারেন্ট ক্রিকেটার লিটন কুমার দাস ও মুমিনুল হকও ছিল এখানে। ক্রিকেটের এখন কী অবস্থা, সেটা তারা সবচেয়ে ভালো জানে।’ ফাহিম আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেক অধিনায়কই তাদের মতো করে নিজেদের মতগুলো দিয়েছে কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে পারি, কোথায় পরিবর্তন দরকার বা কোথায় তেমন ভালো করছি না। এসব কিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এই বোর্ড অবশ্যই আলোচনাকে খুবই গুরুত্ব দেবে এবং এটার ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্ত হবে। যেটা সামনে ক্রিকেট মাঠে বা সূচিতে হয়তো দেখতে পাবো।’

বৈঠকে থাকা ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন অধিনায়কদের সঙ্গে বিপিএল ও অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আরও কীভাবে উন্নত ও আকর্ষণীয় করা যায় সেই ব্যাপারে কথা বলেছেন সভাপতি। বাংলাদেশের অধিনায়কেরা বিভিন্ন সময় যেভাবে তাদের যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তারা তাদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন। মিটিংটা খুবই ফলপ্রসূ ছিল।’ এমন আলোচনার মাধ্যমে ভুল-ত্রুটিগুলো সহজেই বের করা সম্ভব বলে মনে করেন রাজিন সালেহ, ‘প্রেসিডেন্ট ফারুক ভাইকে ধন্যবাদ, আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে। আগামীতে কীভাবে বিপিএলটা আরও ডেভেলপ করা যায় ও ক্রিকেটের উন্নতি করা যায়, এসব নিয়েই কথা হয়েছে। আমরা ৫-৬ জন ছিলাম। মোবাইলে আরও ২-৩ জন ছিলেন। এনসিএল টি-টোয়েন্টি কখন শুরু করলে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবো এসব। বিপিএলে আগামীতে যেন আরও ভালো ফ্র্যাঞ্চাইজি আসে, ভালো টুর্নামেন্ট কীভাবে হবে, ভালো বিদেশি ক্রিকেটারদের কখন পাবো, ওই হিসেবে কথা বলা হয়েছে।’ রাজিন আরও বলেছেন, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে আমি সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেট প্রথম শ্রেণি। এটা কীভাবে ডেভেলপ করা যায়। এর সঙ্গে ডিস্ট্রিক্ট যে টুর্নামেন্টটা আছে, সেসব ক্রিকেটাররা কীভাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সম্পৃক্ত হতে পারে। কীভাবে আরেকটা টুর্নামেন্ট খেললে তারা প্রথম শ্রেণিতে ইনভলব হতে পারে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। আপাতত প্রেসিডেন্ট সাহেব শুনেছেন। আগামীতে প্রথম শ্রেণি বা অন্যান্য টুর্নামেন্ট নিয়ে আরও কথা হবে। উনি আবারও বসবেন আমাদের সঙ্গে।’