স্পোর্টস রিপোর্টার: শ্রীলংকা সফরে এবার শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। টেস্ট সিরিজে হারের পর ওয়ানডে সিরিজেও হারে বাংলাদেশ। তবে টি- টোয়েন্টি সিরিজে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারলেও পরের দুটি ম্যাচে টানা জয়ে সিরিজ জিতে ২-১ ব্যবধানে। ফলে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়ি বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ব্যাট-বলে দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে টাইগাররা ৮ উইকেটের বড় জয় পায়। যা শ্রীলংকার মাটিতে প্রথমবার লিটন-তাসকিনদের সিরিজ জয়। ওয়ানডে এবং টেস্টে বাজেভাবে হারের পর টি-টোয়েন্টিতে সান্ত¡নার জয় নিয়ে গতকাল দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। গতকাল দুপুরে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামেন টাইগাররা। দলের সঙ্গে কোচিং স্টাফসহ ক্রিকেটাররাও দেশে ফিরেছেন। হেড কোচ ফিল সিমন্সসহ এ সময় ক্রিকেটারদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। অধিনায়ক লিটনের হাতে ছিল টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের ট্রফি। দেশে ফেরার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে টিম ম্যানেজার নাফিস ইকবাল বলেন, 'টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে তারা ঘুরে দাঁড়াল তা দুর্দান্ত, খুবই ভালো। খুব ভালো পারফরম্যান্স ছিল। আমাদের সবার আস্থা রাখতে হবে এই দলের ওপর। আমরা যদি এদেরকে সমর্থন দিই, এই দল নিয়ে ইনশাআল্লাহ অনেক দূরে যেতে পারব।' দলের আত্মবিশ্বাস ও মনোবলের ক্ষেত্রে এই জয় গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে নাফিস বলেন, 'শতভাগ মোটিভেটেড এই ধরনের জয় দলের জন্য সবসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমরা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলামÑদেশের জন্য, বোর্ডের জন্য, দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজ জেতা।' তবে আত্মতুষ্টিতে ভাসতে চাননা নাফিস, 'আমরা এক দিনের মধ্যেই আবার নতুন সিরিজ খেলব। ওইভাবেই কথা হয়েছে যে আমাদের খেলা কিন্তু শেষ হয়নি। এরকম না যে আমরা বাসায় ফিরে যাচ্ছি। কেবল আজকের দিনটা বিশ্রাম নিয়ে কালকে থেকে যে যার কাজে আবার নেমে যাবে।' লঙ্কানদের বিপক্ষে তিন ফরম্যাটের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে এলেও অবশ্য বিশ্রামের সুযোগ থাকছে না তানজিদ-ইমনদের। কেননা আজ থেকেই আবার তাদের অনুশীলনে নামতে হবে। প্রস্তুতি নিতে পাকিস্তান সিরিজের জন্য। গতকাল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩২ রান সংগ্রহ করে শ্রীলংকা। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষে মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট নেন স্পিনার শেখ মেহেদি। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ১৬.৩ ওভারেই ৮ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ফলে তারা সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে লঙ্কানদের বিপক্ষে জিতল ২-১ ব্যবধানে। এর আগে ডাম্বুলায় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও দুর্দান্ত খেলেছিল বাংলাদেশ, যেখানে ৮৩ রানের বড় জয় পায় দলটি। যদিও সফরের শুরুতে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে, তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে শেষটা রাঙিয়ে দেশে ফিরেছে তারা। সফরে প্রথমে একটি টেস্ট ড্র করে পরেরটিতে হার। বাংলাদেশের সুযোগ ছিল ওয়ানডে সিরিজে সেই হতাশা কাটানোর। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথমটিতে জয়ের মঞ্চ গড়ে দিয়েছিলেন বোলাররা। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় হাতের মুঠোয় থাকা জয় হাতছাড়া হয়। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতলেও শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার মাটিতে ইতিহাস গড়ে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হেরেছে ২-১ ব্যবধানে। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজে আর ভুল করেনি টাইগাররা। এরপর বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি মিশনে নামবে। আগামী ২০, ২২ ও ২৪ জুলাই মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ম্যাচই শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে। এর আগে বাংলাদেশ দল মে মাসে পাকিস্তানে তিন ম্যাচের আরেকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে এসেছে। যেখানে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হয় লিটন-শান্ত-মিরাজরা।

সিরিজ জেতার পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে লিটন বলেন, আমাদের দল যেভাবে খেলেছে, আমি খুব খুশি। ছেলেরা তাদের ক্যারেক্টার দেখিয়েছে। বিশেষ করে আমরা প্রথম টি-টোয়েন্টিতে যেমন খারাপ খেলেছিলাম। আজ টস জিতলে আমরাও ব্যাটিং নিতাম। কারণ আমাদের ভালো একটা বোলিং আক্রমণ আছে। শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ই নয়, শ্রীলঙ্কার মাটিতেও এটি বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। লিটন মনে করেন, এটা বড় এক অর্জন। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, বাংলাদেশের জন্য এটা বড় এক অর্জন। এই জয় আমাদের ক্রিকেট এবং তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে। আমাদের স্বপ্ন অনেক বড় এবং এটা সাহায্য করবে। মেহেদী হাসান মিরাজকে বাদ দিয়ে শেখ মেহেদীকে একাদশে খেলানো প্রসঙ্গে লিটন বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল এই পিচে সে ভালো করবে। এজন্যই তাকে খেলানো হয়েছে। এটার মানে এমন না যে, মেহেদী হাসান মিরাজ খারাপ খেলোয়াড়। পিচের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।