সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইতোমধ্যে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের পর আজ থেকে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি লড়াই। চট্টগ্রামের সাগরিকায় গতকাল অনুশীলনে অংশ নেয় দুই দলই। জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে উন্মুখ স্বাগতিক বাংলাদেশ ও সফরকারী ক্যারিবীয়রা।

তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুই দল এখন সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে। বাংলাদেশ টানা চারটি সিরিজ জয়ের ধারায় থাকলেও, ওয়েস্ট ইন্ডিজ গত পাঁচ সিরিজের মধ্যে চারটিতেই পরাজিত হয়েছে। এর মধ্যে টানা তিন সিরিজে হার তাদের আত্মবিশ্বাসে আঘাত করেছে। এবার সেই হারার বৃত্ত ভেঙে জয়ের পথে ফেরার চ্যালেঞ্জ শাই হোপদের সামনে।

মিরপুরে ওয়ানডে সিরিজজুড়ে ছিল স্পিনারদের দাপট। কালো মাটির ধীরগতির উইকেট নিয়ে সমালোচনা থাকলেও সরাসরি তাতে আঙুল তোলেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচ ড্যারেন স্যামি। তবে সামনে থাকা টি-টোয়েন্টি সিরিজে সাগরিকায় ভালো উইকেটের আশায় আছেন তিনি। স্যামি বলেন, “আমি সবসময়ই স্বাগতিক দলের হোম অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার পক্ষেই। বাংলাদেশকে তো আমি বলতে পারি না, কী ধরনের উইকেট বানাতে হবে। আমার মনোযোগ থাকে এমন একটি দল গড়ে তোলায়, যারা দেশের বাইরে গিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি সামলাতে পারে।”

উইকেট নিয়ে সমালোচনায় না গিয়ে বরং বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামি। তিনি বলেন, “উইকেটটা আমাদের জন্য নতুন ছিল। তবে এমন নয় যে এক দল এক রকম উইকেটে খেলেছে আর অন্য দল অন্য রকমে-সবাই একই পরিবেশে খেলেছে। এখানেই বোঝা যায়, কে পরিস্থিতির সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছে, কে পারেনি। এই দিক থেকে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা আমাদের চেয়ে স্পষ্টভাবেই এগিয়ে ছিল।”

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১৯ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে ক্যারিবীয়রা জিতেছে ৯ ম্যাচে, আর বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৮টিতে। দুই দল মোট আটটি সিরিজে লড়েছে—যার মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে চারটি, বাংলাদেশ তিনটি, আর একটি সিরিজ শেষ হয়েছে ড্রয়ে। সর্বশেষ মুখোমুখি লড়াইয়ে একপেশে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। লিটন দাসের নেতৃত্বে দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাঠে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ে। সেন্ট ভিনসেন্টে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই তিন ম্যাচের সিরিজ।

এবার এমন এক সময়ে বাংলাদেশের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যখন দলটি গভীর সংকটে রয়েছে। সদ্যই তারা আইসিসির সহযোগী দেশ নেপালের কাছে ১-২ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এই দলটি বছরের শুরু থেকেই তাদের প্রিয় ফরম্যাটে ছন্দহীন। জুনে ইংল্যান্ড সফরে ৩-০ ব্যবধানে হারের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচে জয় পেলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। দেশে ফিরে অস্ট্রেলিয়ার কাছে টানা পাঁচ ম্যাচে হেরে বসে তারা। এরপর মায়ামিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১-২ ব্যবধানে এবং সর্বশেষ আরব আমিরাতে নেপালের কাছেও একই ব্যবধানে সিরিজ হারতে হয়েছে মেরুন বাহিনীকে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে তারা, এর মধ্যে ১২টিতেই পরাজয়ের মুখ দেখেছেন শাই হোপ ও আকিল হোসেনরা।

অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে বাংলাদেশ। মাসের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। সেই সিরিজে ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক লিটন দাস; তার অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেন জাকের আলী, এবং তার নেতৃত্বেই দলটি দেখিয়েছে দারুণ পারফরম্যান্স।

এশিয়া কাপে দুর্দান্ত সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম পর্বে হংকং, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সুপার ফোরে উঠলেও সেখানে ভারত ও পাকিস্তানের কাছে পরাজিত হয় টাইগাররা। এর আগে নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা তিনটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিজেদের ফরম্যাটে ধারাবাহিক সাফল্যের প্রমাণ দেয় বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে নেপাল সিরিজে অভিষিক্ত বামহাতি পেসার র‌্যামন সিমন্ডস এবং ব্যাটসম্যান আমির জাঙ্গুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকায় স্পিনারদের দাপট দেখার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের স্কোয়াড শক্তিশালী করতে খারি পিয়েরেকে যুক্ত করেছে। বর্তমানে ক্যারিবীয় দলের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড ১৪ সদস্যের। ইনজুরির কারণে আগেই স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন শামার জোসেফ ও জেডেন সিলস।

তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাকি ম্যাচে মুখোমুখি হবে, ২৯ এবং ৩১ তারিখে। সব ম্যাচই শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।

বাংলাদেশ দলের স্কোয়াড:

লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক, শামিম হোসেন পাটোয়ারী, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, নুরুল হাসান সোহান ও সাইফ হাসান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের স্কোয়াড:

শাই হোপ (অধিনায়ক), অলিক আথানাজে, আকিম অগাস্টে, রোস্টন চেজ, জেসন হোল্ডার, আকিল হোসেন, আমির জাঙ্গু, ব্রেন্ডন কিং, গুদাকেশ মোতি, রভম্যান পাওয়েল, শেরফান রাদারফোর্ড, জেইডেন সিলস, রোমারিও শেফার্ড, রেমন সিমন্ডস ও খারি পিয়েরে।