এবার বোলিং পরীক্ষায় পাস করলেন সাকিব আল হাসান। এখন থেকে যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন সাকিব। তৃতীয়বারের চেষ্টায় কৃতকার্য হলেন সাকিব। তার বোলিং অ্যাকশনকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে ইংল্যান্ডের লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার রিপোর্ট। গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে সারের হয়ে বোলিং করতে গিয়ে অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন তিনি। ফলে ইসিবি (ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড) যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে সাকিবের বোলিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর এই লাফবোরোর ল্যাবেই প্রথমবারে বোলিংয়ের পরীক্ষা দেন সাকিব। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসে নেতিবাচক। অর্থাৎ অকৃতকার্য হলেন তিনি। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেন ভারতের চেন্নাইয়ে। সেই পরীক্ষায়ও সুসংবাদ পাননি সাকিব। সর্বশেষ তৃতীয়বার পরীক্ষা দিলেন সেই লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। এবার সেখান থেকে সুসংবাদ পেলেন তিনি। লাফবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে সাকিবের বোলিং অ্যাকশনের সর্বশেষ পরীক্ষা হয়েছে গত ৯ মার্চ। যার ফলাফল সাকিব জেনেছেন গতকাল, বুধবার। সেই ফল অনুসারে- তার বোলিং অ্যাকশন এখন বৈধ। সর্বশেষ বোলিং পরীক্ষায় সাকিব মোট ২২টি ডেলিভারি দিয়েছিলেন। যার প্রায় সবই ত্রুটিমুক্ত। দু-একটি ডেলিভারিতে সামান্য সমস্যা থাকলেও তা ধরার মধ্যে নেননি লাফবোরোর বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, বোলিংয়ের পরীক্ষা দেয়ার জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ইংল্যান্ডে থাকছেন সাকিব। লন্ডনের কেনিংটন ওভালের কাছের এক হোটেলে প্রায় দুই সপ্তাহ সারে দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন কিয়া ওভালে। সেই অনুশীলনে সাকিবকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে সারে। প্র্যাকটিস উইকেট, বিশেষজ্ঞ কোচ, জিমনেসিয়াম- সব সুযোগ-সুবিধাই সাকিব পেয়েছেন। সারের উদ্দেশ্য হলো, সাকিবকে দলে নেয়া। বোলিংয়ের পাশাপাশি সাকিব ব্যাটিং অনুশীলনও করে গেছেন। প্রায় দুই সপ্তাহের অনুশীলনের পর তৃতীয়বারের মত পরীক্ষা অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন তিনি। বোলিং পরীক্ষায় বৈধতা ফিরে পাওয়ার পর গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানিয়েছে, ‘গত ৯ মার্চ ইংল্যান্ডের লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ে বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা দেন সাকিব। সর্বশেষ মূল্যায়নের ফলাফল অনুসারে, সাকিব তার বোলিং অ্যাকশন সংশোধন করেছেন এবং এর ফলে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড(ইসিবি) তাদের প্রতিযোগিতামূলক সব কাউন্টি ক্রিকেট এবং দ্যা হান্ড্রেড থেকে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।’ আরও বলা হয়, ‘ইসিবি শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি বিস্তারিত মিডিয়া বিজ্ঞপ্তি আকারে জানাবে।’ এর আগে বার্মিংহ্যাম এবং চেন্নাইয়ে পরপর দুবার বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন সাকিব। স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসে নিষেধাজ্ঞা। তার আগে কাউন্টি ক্রিকেটে সারের হয়ে খেলার সময়ে ত্রুটি ধরা পড়ে তার বোলিংয়ে। সেই ত্রুটি সারাতে চলতি মাসে সাকিব কাজ করেছেন সারের কোচ গ্যারেথ ব্যাটির সঙ্গে। লম্বা সময় পর তার সুফলও পেলেন সাকিব। প্রসঙ্গত, গেল বছরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান সফর থেকে দেশে না ফিরে সারের হয়ে একটি ম্যাচ খেলতে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন সাকিব। সেখানে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬৩ ওভার বোলিং করে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের সেই ম্যাচেই সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন আম্পায়াররা। এরপর প্রথমে বার্মিংহ্যামের লাফবরো ইউনিরভার্সিটির ল্যাবে পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হন সাকিব। পরে ভারতে ২১ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ের শ্রী রমাচন্দ্র সেন্টার ফর স্পোর্টস সায়েন্সে দেওয়া পরীক্ষাতেও পাশ করতে পারেননি সাকিব। যে কারণে আগের মতোই নিষিদ্ধ থাকতে হয় সাকিবকে। বোলিং অ্যাকশনে ত্রুটি থাকায় সাকিব মিস করেছেন দেশের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সুযোগটাও। কেবল ব্যাটার সাকিবকে বিবেচনায় রাখতে চায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে এবারে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয়ে ফের সাকিব খেলার সুযোগ পাচ্ছেন কি না সেটাও দেখার বিষয়।