DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

ক্রিকেট

ভারতের সাফল্য বেশি থাকলেও কাছাকাছি আছে নিউজিল্যান্ডও

আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোয় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে ভারত। দুইয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকলেও খুব পিছিয়ে নেই নিউজিল্যান্ড। তিনে আছে দলটি। ২৫ বছর পর আবার ফাইনালে আজ মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-নিউজিল্যান্ড দুই দল।

স্পোর্টস রিপোর্টার
Printed Edition

আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোয় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে ভারত। দুইয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকলেও খুব পিছিয়ে নেই নিউজিল্যান্ড। তিনে আছে দলটি। ২৫ বছর পর আবার ফাইনালে আজ মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-নিউজিল্যান্ড দুই দল। তবে শিরোপার মঞ্চে দুই দলের লড়াই দুই যুগের বেশি সময় পর হলেও বিভিন্ন সংস্করণে বৈশ্বিক আসরে তাদের সাফল্য দেখা গেছে নিয়মিতই। গত ১৪ বছরে বিভিন্ন আইসিসি টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে ভারতীয়রা। সাফল্য কম নেই কিউইদেরও। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে নাইরোবিতে খেলেছিল ভারত ও নিউজিল্যান্ড।

২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে এখনও পর্যন্ত আইসিসির সাদা বলের টুর্নামেন্টগুলোয় ভারতের জয়ের হার চোখ কপালে তোলার মতো। এই সময়ে রঙিন পোশাকের বৈশ্বিক আসরে ৮৬ ম্যাচের ৭০টিই জিতেছে তারা! আর কোনো দল জিততে পারেনি ৫০টিও। ভারত হেরেছে ১৫টিতে, টাই হয়েছে বাকি ম্যাচটি। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৭৭ ম্যাচে ৪৯টি। তারা হেরেছে ২৩ ম্যাচ, পরিত্যক্ত পাঁচটি। অস্ট্রেলিয়ার সমান ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ডের জয় ৪৫টি। তারা হেরেছে ২৭ ম্যাচে, টাই হয়েছে তিনটি, পরিত্যক্ত দুটি। ঠিক ৭৭ ম্যাচ খেলে ৪৫টি জয় আছে দক্ষিণ আফ্রিকারও। তবে তারা হেরেছে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে দুটি ম্যাচ বেশি। তাদের একটি ম্যাচ হয়েছে টাই, পরিত্যক্ত ২টি। এছাড়া ৭৩ ম্যাচ খেলে ৪১টি জিতেছে পাকিস্তান, ৮০ ম্যাচ খেলে ৪১টি ইংল্যান্ড, ৭৫ ম্যাচে ৩৮টি শ্রীলঙ্কা, ৫৯ ম্যাচে ২৭টি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ৭১ ম্যাচ খেলে ২৩টি বাংলাদেশ ও ৫৫ ম্যাচ খেলে ১৮টি জিতেছে আফগানিস্তান।

২০১১ থেকে এখনও পর্যন্ত দুটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালসহ মোট ১৪টি আইসিসি টুর্নামেন্ট হয়েছে। ১২টি আসরেই নকআউট পর্বে খেলেছে ভারত। শুধু শ্রীলঙ্কায় ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা ছিটকে গিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে, আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা উতরাতে পারেনি গ্রুপ পর্ব। নকআউটে যাওয়া ১২ ম্যাচে তারা সেমি-ফাইনালে হেরেছে চারবার, ফাইনালে হেরেছে পাঁচবার। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এই সময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ বার নকআউটে খেলেছে নিউজিল্যান্ড। তারা চারবার আটকে গেছে সেমি-ফাইনালে, রানার্স আপ হয়েছে তিনবার। প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে তারা ২০২১ সালে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে। ইংল্যান্ড নকআউটে খেলেছে সাতবার, অস্ট্রেলিয়া ছয়বার, পাঁচবার করে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

এই সময়টায় সাদা বলের আসরগুলোয় ভারত নকআউট পর্বে পৌঁছেছে গ্রুপ পর্বে কোনো ম্যাচ না হেরেই। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা ছিল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। গ্রুপ পর্বে তাদের সবশেষ পরাজয় ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নিউজিল্যান্ড নকআউটে পা রেখেছিল অপরাজিত থেকে। ২০১১ থেকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বের যে ৩৮টি ম্যাচ খেলেছে ভারত, অবিশ্বাস্যভাবে এর ৩৪টিই তারা জিতেছে। হেরেছে স্রেফ তিনটি, টাই হয়েছে একটি। তাদের জয়-পরাজয়ের অনুপাত ১১.৩৩৩। এখানে তাদের ধারে কাছে নেই কোনো দল। এই সময়টায় দুইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার জয়-হারের অনুপাত ২.৫৫৫। ৩৭ ম্যাচে তারা জিতেছে ২৩টি, হেরেছে ৯টি, পরিত্যক্ত হয়েছে ৫টি ম্যাচ। নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাও জিতেছে ২৩টি করে। তবে তারা ম্যাচ খেলেছ ৩৮টি করে। পাকিস্তান জিতেছে ৩৭ ম্যাচের ২০টিতে। ভারতের এই অপ্রতিরোধ্য পথচলায় বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের অবদান বেশি। তবে ভিরাট কোহলি ও রোহিত শার্মার চেয়ে বেশি সাফল্য পাননি আর কেউ। বড় আসরের বড় তারকা তারা। এই সময়ে তিনটি আসরে ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট হয়েছেন কোহলি, ২০১৪ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তিনিই এখানে সর্বোচ্চ। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার ৭৬৫ রান এক আসরে সবচেয়ে বেশি রানের বিশ্বরেকর্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সবচেয়ে বেশি রানের কীর্তি তার (১ হাজার ২৯২)। এবার ফাইনালে ৪৬ রান করলে ক্রিস গেইলকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও সবচেয়ে বেশি রান হবে তারই। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাত সেঞ্চুরির রেকর্ড রোহিতের। তিনটির বেশি শতরান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটও তার (১০৫.৪৯)। ২০১৯ বিশ্বকাপেই করেছিলেন তিনি পাঁচটি সেঞ্চুরি। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি শতরানের কীর্তি সেটি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রানের তালিকায় কোহলির পরই আছেন রোহিত (১ হাজার ২২০)। তার ৫০ ছক্কা এই সংস্করণের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (ক্রিস গেইল মেরেছেন ৬৩ ছক্কা)। নিউজিল্যান্ডের হয়ে আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই কেন উইলিয়ামসনের রাজত্ব। এখানে তিনি অবিসংবাদিত সেরা। সাদা বলের ক্রিকেটের তিনটি আসরেই তিনি কিউইদের সফলতম ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২৬ ম্যাচে ৬১.৪২ গড়ে তার রান ১ হাজার ১৬৭। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এখনো পর্যন্ত করেছেন ১০ ম্যাচে ৫৯.৩৩ গড়ে ৫৩৪ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩১.৬০ গড়ে তার রান ৭২৭। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট ছিলেন তিনি। সেবার রান করেছিলেন ৫৭৮, এক বিশ্বকাপে যা নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড। গত বিশ্বকাপে সেই রেকর্ড স্পর্শ করেন রাচিন রাভিন্দ্রা। তবে প্রাথমিক পর্বের লড়াই বা জয়ের ধারায় ভারত সবার ওপর থাকলেও একটি জায়গায় গত ১৪ বছরেও শ্রেষ্ঠ অস্ট্রেলিয়া। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি চারটি শিরোপা তারা জিতেছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২৩ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওই বছরই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফি জয় করে তারা। ভারত জিতেছে তিনটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুটি।