এশিয়া কাপের আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজ থেকে ভালো কিছুর আশায় বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। তবে এই সিরিজ হেরে গেলেও ভড়কে যাবেন না অধিনায়ক লিটন।এই ধরনের সিরিজে প্রাপ্তির সুযোগ খুব বেশি নেই। তবে হারানোর আছে অনেক কিছু! সেই শঙ্কাকে আলিঙ্গন করেই লিটন কুমার দাস বলছেন, ‘যদি হেরে যাই, হারতেই পারিৃ।’ এর মানে এই নয় যে, পরাজয়কে ভাবনায় রেখে মাঠে নামবেন তারা। তিনি বরং তাকিয়ে সম্ভাবনার পূর্ণতায়। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজে দারুণ কিছু করে এশিয়া কাপের জন্য আত্মবিশ্বাসের রসদ আরও সমৃদ্ধ করতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক। এশিয়া কাপের প্রস্তুতির জন্যই মূলত এই সিরিজটির ব্যবস্থা করেছে বিসিবি। স্বয়ং লিটনেরও চাওয়া ছিল এমন একটি সিরিজের। বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছিলেন, এশিয়া কাপের আগে একটি সিরিজ খেলতে পারলে ভালো হয়। সেই সিরিজ এখন দুয়ারে দাঁড়িয়ে। সিলেটে তিন ম্যাচের সিরিজটি শুরু শনিবার। প্রস্তুতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি জয়, এরকম একটি প্রশ্ন তো থাকছেই।
গতকাল অনুশীলন শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিটন বললেন, জয়ই তো আদর্শ প্রস্তুতি। তিনি বলেন,’ আমরা খেলব জেতার জন্যই। যেহেতু আমাদের হাতে খুব বেশি সময়ও নেই, এই সিরিজের পরই বড় আসর, এশিয়া কাপ, আমার মনে হয় এশিয়া কাপের আগে এটি একটি খুব ভালো সিরিজ হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। ওখানে (আবু ধাবি) একইরকম কন্ডিশন থাকার সম্ভাবনা বেশি। আশা করি, এই সিরিজ থেকে ভালো কিছু নিতে পারব এশিয়া কাপের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং। নেদারল্যান্ডস ভালো টিম। হয়তো তারা এই কন্ডিশনে খুব একটা খেলে না। তবে যদি ভালো উইকেটে খেলা হয়, তারা ভালো উইকেটে ভালো ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত। যদি এশিয়া কাপের আগে আমাদের হাতে ওই সুযোগ থাকে, অবশ্যই কিছু ক্রিকেটারকে দেখে নিতে চাইব। পাশাপাশি এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, জেতার জন্যই যেতে হবে।’ প্রত্যাশার পথ ধরে জয় পেলে তো ভালোই। কিন্তু এই ধরনের সিরিজে হেরে গেলে সেই ধাক্কাটা আরও বেশি প্রবল হয়েই লাগে! আত্মবিশ্বাসে চোট লাগে অনেক বেশি। লিটন এই ভাবনাটাকেই পাত্তা দিতে চাইলেন না।
‘ঝুঁকি না জিনিসটাৃ বাংলাদেশ এর আগেও অনেক দলের কাছে হেরেছে, নতুন কোনো কিছু না। যদি হেরেও যাই, হেরে যেতেই পারি। দুইটা দলই খেলতে এসেছে, একটা দল জিতবে, একটা দল হারবে। তবে আমরা কতটা ক্রিকেট ভালো খেলতে পারছি, এটা হচ্ছে মূল ব্যাপার।’ এশিয়া কাপে চোখ রেখে গত তিন সপ্তাহ ধরে নিবিড় অনুশীলন চলছে বাংলাদেশ দলের। শুরুতে ছিল শুধুই ফিটনেস নিয়ে কাজ। ট্রেনার ন্যাথান কাইলির তত্ত্বাবধানে সেখানে ঘাম ঝরিয়েছেন ক্রিকেটাররা। এরপর স্কিল ঝালাই ও ফিটনেস অনুশীলন চলেছে পাশাপাশি। ঢাকা থেকে সিলেটে গিয়েও সপ্তাহখানেক ধরে চলছে এই প্রস্তুতির পালা।
‘পাকিস্তান সিরিজের সময়ও বলেছিলাম যে, আমাদের একটা বিরতি থাকব এবং এখনকার ক্রিকেটে ফিটনেস অনেক বড় একটা ব্যাপার, যেটা আমরা করেছি। ফিটনেসের প্রতি ফোকাস ছিল আমাদের সবার। ফিটনেসের পরে আমরা আমাদের স্কিলও উন্নত করার চেষ্টা করেছি। সব মিলিয়ে আমি যদি দেখি, আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো। এত ভালো সুযোগ-সুবিধাসহ প্রস্তুতি খুব কমই পাওয়া যায়। বাংলাদেশ দলের সবশেষ যে বিরতি ছিল, বিরতির পর থেকে খুব ভালো প্রস্তুতি হয়েছে।’ এই প্রস্তুতিপর্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল বিশেষজ্ঞ কোচ জুলিয়ান উডের তত্ত্বাবধানে পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ। উড আগে দুই দফায় বিপিএলে কাজ করে গেছেন। তবে জাতীয় দলের ক্যাম্পে তার উপস্থিতি এবারই প্রথম। বাংলাদশের ব্যাটসম্যানদের একটি চিরন্তন দ্র্বুলতাও তাই এবার কিছুটা হলেও কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। লিটন অবশ্য রাতারাতি বদলের আশা দেখালেন না।
লিটন বলেন, ‘কেউ আসলে তো দুই-তিন দিনে পুরো বদলে দিতে পারবে না, তবে তার (উড) কিছু ভাবনা ও প্রক্রিয়া ছিল অনুশীলনের, যেগুলো নতুন মনে হয়েছে আমাদের কাছে। আমরা কাজ করেছি। দেখা যাক, বাদবাকিটা এখন... এখনও তো ম্যাচ খেলিনি সে আসার পরে। আমাদের একটা ম্যাচও হয়নি। নেদারল্যান্ডসের সিরিজ দিয়েই দেখা যাবে যে বাংলাদেশ দল এখান থেকে কতখানি উন্নতি করেছে।’
তিনি আরো বলেন, “আমরা যারা ক্রিকেট এখানে খেলি, প্রায় সাত-আট বছর হয়ে গেছে, কারও কারও ১০ বছর হয়ে গেছে। একটা ধরন তো থাকে। যে যার ধরনে ক্রিকেট খেলে থাকে। এর মধ্যেই চেষ্টা করছে আলাদা কিছু আনার জন্য। তবে এটা দেখা যাবে, আপনার একটু সময় দিতে হবে। কোনো কিছু তো একদিনে-দুইদিনে বদলে যায় না। যদি একটু সময় আমরা ওই ফোকাসে থাকতে পারি, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বদল দেখা যাবে।”