জাতীয় ক্রিকেট লিগের উদ্বোধনী দিনেই সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদুল হাসান জয় ও ইয়াসির আলি চৌধুরী। জয় ও ইয়াসির আলির সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ গড়ল চট্টগ্রাম। দুটি সেঞ্চুরির পরও অবশ্য জাতীয় ক্রিকেট লিগের নতুন আসরের প্রথম দিনেই গুটিয়ে গেল চট্টগ্রামের প্রথম ইনিংস। রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তারা করতে পারল ৪০১ রান। জবাব দিতে নেমে স্বস্তিতে নেই স্বাগতিকরা। হাসান মুরাদের বাঁহাতি স্পিনে ৫ ওভারের মধ্েয তারা হারিয়েছে ২ উইকেট। ১ রান করে ফিরেছেন হাবিবুর রহমান সোহান। রানের খাতা খুলতে পারেননি নাইটওয়াচম্যান শফিকুল ইসলাম। দুই জনই মুরাদের বলে হয়েছেন কট বিহাইন্ড। ক্রিজে থাকা অধিনায়ক সাব্বির হোসেন ও রাহিম আহমেদ এখনও রানের দেখা পাননি। এর আগে ব্যাট করতে নেমে দুই অঙ্ক ছুঁয়ে ফেরেন সাদিকুর রহমান, মুমিনুল হক ও শাহাদাত হোসেন। চাপে পড়া চট্টগ্রামকে পথ দেখান জয় ও ইয়াসির। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দুই জনে বাড়ান রান। ৮৩ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন জয়, ১৩৮ বলে তার ব্যাট থেকে আসে আসরের প্রথম সেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যা তার পঞ্চম সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে ৬৪ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইয়াসির তিন অঙ্কে যান ১০২ বলে, ছক্কা মেরে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একাদশ সেঞ্চুরি হলো তার, এই সংস্করণে পাঁচ হাজার রানও পূর্ণ করলেন তিনি। জয় ও ইয়াসিরের জুটি দুইশ ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল আরও সামনে। তাইজুলের বলে জয় কট বিহাইন্ড হলে ভাঙে ২২১ রানের জুটি। জাতীয় দলে জায়গা হারানো জয় ১৬৫ বলে দুই ছক্কা ও ১৫ চারে করেন ১২৭ রান। এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি ইয়াসির। এসএম মেহরব হাসানের বলে তিনি ধরা পড়েন তাইজুলের হাতে। ১৩৮ বলে ৬ ছক্কা ও ১০ চারে ১২৯ রান করেন বাংলাদেশের হয়ে ছয়টি টেস্ট খেলা ইয়াসির।অ্যাক্টিভওয়্যার ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া ইরফান শুক্কুর ৬৩ বলে ১২ চারে করেন ৭২ রান। এই কিপার-ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউ করেন মেহরব। এরপর বেশিদূর এগোয়নি চট্টগ্রামের ইনিংস।
৩৪ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৯ রান করেন তাইজুল। সুজন হাওলাদার ও মেহরব নেন দুটি করে উইকেট।
দিনের অন্য ম্যাচে খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ১৫০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে গেল খুলনা। বরিশালের বিপক্ষে সেখান থেকে দলকে তিনশ রানে নিয়ে গেলেন জিয়াউর রহমান ও শেখ পারভেজ জীবন। উদ্বোধনী দিনের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসে খুলনার সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩১২। ৯ নম্বরে নামা পারভেজ পাঁচটি করে ছক্কা ও চারে খেলছেন ক্যারিয়ার সেরা ৭২ রানে। অবিচ্ছিন্ন দশম উইকেটে তার সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়া সফর আলি খেলছেন ৬ রানে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করে খুলনা। কিন্তু এনামুল ও সৌম্যর কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি।
৩০ রান করে মইন খানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান এনামুল। ভাঙে ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। শামসুর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সৌম্য (৩৭)। অমিত মজুমদারকে দুই অঙ্ক ছুঁতে দেননি রুয়েল মিয়া। তার বলেই গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান আফিফ হোসেন। পরে নাহিদকে ফিরিয়ে খুলনার সম্ভাবনাময় জুটিও ভাঙেন রুয়েল। বরিশাল অধিনায়কের বলে ইমরান (৪৩) এলবিডব্লিউ হয়ে বিপদে পড়ে যায় খুলনা। সেখান থেকে দলকে টানেন অধিনায়ক ও ইয়াসিন মুন্তাসির। দুইশ ছোঁয়ার আগে ইয়াসির বিদায় নিলে জুটি গড়েন জিয়া ও পারভেজ। তাদের ব্যাটে আড়াইশ ছাড়িয়ে যায় খুলনা। চার ছক্কা ও পাঁচ চারে ৬৯ রান করা জিয়াকে ফিরিয়ে ৭০ রানের জুটি ভাঙেন মইন। পরের ওভারে নেন আব্দুল হালিমের উইকেট। তবে দিনের শেষ বেলায় সফরকে নিয়ে দারুণ প্রতিরোধ গড়েন ১৯ বছর বয়সী পারভেজ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় পঞ্চাশের দেখা পাওয়া লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের সামনে প্রথম সেঞ্চুরির হাতছানি। বরিশালের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন মইন ও রুয়েল। জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বড় একটা অংশের অনুপস্থিতিতেই শুরু হচ্ছে জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) নতুন আসর।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ২৭তম আসরের শুরুতে খেলা হবে না লিটন কুমার দাস, জাকের আলিদের। অ্যাক্টিভওয়্যার তিন জেলার চারটি মাঠে শনিবার শুরু হচ্ছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের দেশের প্রধান টুর্নামেন্ট এনসিএলের ২৭তম আসর। বিভাগ হওয়ার ১০ বছর পর এবারই প্রথম লাল বলের চার দিনের ম্যাচের টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে ময়মনসিংহ।
টেস্টে উন্নতির জন্য ঘরোয়া চার দিনের টুর্নামেন্টগুলোতে খেলা জরুরি। কিন্তু জাতীয় দলের খেলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কিংবা টানা খেলার ক্লান্তিজনিত কারণে অনেক সময়ই এনসিএল, বিসিএলে খেলা হয় না তারকা খেলোয়াড়দের। এবার যে সময়ে খেলা শুরু হচ্ছে তাতে জাতীয় দল এবং এর আশেপাশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের এনসিএলে খেলার সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দেশের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। আইরিশদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ আগামী ২ ডিসেম্বর। এনসিএলের সপ্তম ও শেষ রাউন্ড শুরু হবে ৬ ডিসেম্বর। কেবল এই একটি রাউন্ডে জাতীয় দলের সব খেলোয়াড়কে পাওয়া যেতে পারে! টুর্নামেন্টের শুরুতে নেই কোনো পৃষ্ঠপোষক।