শ্রীলংকার কাছে হেরে নারী বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচ খেলে ১ জয় ও ৫ হারে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তম স্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ। এই জয়ে ৬ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে উঠে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল শ্রীলংকা। জয়ের জন্য শেষ ৬ বলে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৯ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। কিন্তু ম্যাচের শেষ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১ রান তুলতে পারে টাইগ্রেসরা। ফলে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে ৭ রানে হেরেছে টাইগাররা। এতে লিগ পর্বে এক ম্যাচ বাকী থাকতেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। টস হেরে প্রথমে বোলিংয়ে নেমে দারুণ সূচনা পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলেই বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দেন পেসার মারুফা আকতার। রিভিউ নিয়ে শ্রীলংকার ওপেনার ভিসমি গুনারত্নকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মারুফা। এরপর ৭২ রানের জুটিতে শ্রীলংকাকে চাপুমক্ত করেন অধিনায়ক ও ওপেনার চামারি আতাপাত্তু ও হাসিনি পেরেরা। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৬ রান করা আতাপাত্তুকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলে জুটি ভাঙেন স্পিনার রাবেয়া খান। আতাপাত্তুকে ফিরিয়ে দ্রুত আরও ২ উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। হার্সিতা সামারাবিক্রমা ৪ রানে রান আউট এবং কাভিশা দিলহারি ৪ রানে স্পিনার নাহিদা আকতারের শিকার হন। এতে ১শ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। পঞ্চম উইকেটে ৭৪ রানের জুটিতে শ্রীলংকাকে বড় পুঁজির স্বপ্ন দেখান পেরেরা ও নিলাকশিকা সিলভা। কিন্তু পেরেরা ও সিলভাকে শিকার করে লংকানদের বড় সংগ্রহের আশা ধুলিসাৎ করে দেন বাংলাদেশের লেগ স্পিনার স্বর্ণা আকতার। এতে ২৮ রানের ব্যবধানে শেষ ৬ উইকেট পতনে ৪৮.৪ ওভারে ২০২ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। শ্রীলংকার পতন হওয়া শেষ ৬ উইকেটের ৩টিই নিয়েছেন স্বর্ণা। এজন্য ১০ ওভারে ২৭ রান খরচ করেছেন তিনি। এছাড়া রাবেয়া ২টি, নাহিদা-মারুফা ও নিশি ১টি করে উইকেট নেন। ২০৩ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফারজানা হক ৭, রুবাইয়া হায়দার শূন্য ও সোবাহান মোস্তারি ৮ রান করেন। চতুর্থ উইকেটে ১২০ বলে ৮২ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন শারমিন আকতার ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ৩৬তম ওভারে দলীয় ১২৬ রানে আহত অবসর নেন শারমিন। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ১০৩ বলে ৬৪ রান করেন তিনি। এরপর স্বর্ণা আকতারকে নিয়ে ৫৮ বলে ৫০ রানের জুটিতে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা জাগান নিগার। শেষ ৩০ বলে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ২৭ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে ১৯ রানে আউট হন স্বর্ণা। ষষ্ঠ উইকেটে রিতু মনিকে নিয়ে ১৭ রান যোগ করে বাংলাদেশকে জয়ের পথে রাখেন নিগার। জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে ১২ রানের সমীকরণ পায় টাইগ্রেসরা। ৪৯তম ওভারে রিতুকে হারিয়ে মাত্র ৩ রান তুলে বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ ওভারে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৯ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশের। শ্রীলংকার স্পিনার আতাপাত্তুর করা শেষ ওভারের প্রথম ৪ বলে একটি রান আউট সহ ৪ উইকেট হারায় টাইগ্রেসরা। পঞ্চম বলে ১ রান উঠলেও, শেষ বল থেকে কোন রান না আসায় ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯৫ রান করে তারা। ৬টি চারে ৯৮ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন নিগার। যা বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের পক্ষে এটি সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। শ্রীলংকার আতাপাত্তু ৪২ রানে ৪ উইকেট নেন। ২৬ অক্টোবর লিগ পর্বে নিজেদের সপ্তম ও শেষ ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচ হারের পর অধিনায়ক জ্যোতি বলেন, ‘এটা (পরাজয়) সত্যিই হৃদয়বিদারক। কারণ আমরা এখানেও জয়ের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। এই ধরনের ম্যাচ, আমার মনে হয় আমরা ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং এখন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনটি ম্যাচ খেলেছি। আমাদের এটা নিয়ে ভাবা উচিত এবং আমাদের অনেক কিছু শিখতে হবে। এই ধরনের পরিস্থিতি, কীভাবে আমাদের স্নায়ু শান্ত করতে হবে এবং কীভাবে আমাদের রান করা উচিত। আর অবশ্যই, তরুণ খেলোয়াড়রা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসেছিল। তাদেরও শিখতে হবে এই পরিস্থিতিতে কিভাবে খেলতে হবে।’