বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সাফের নির্বাচনকালে বয়স ৭০ বছরের নিচে থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে গতকাল শ্রীলংকার কলম্বোয় অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে সভাপতি নির্বাচনে বয়সসীমার বাধা উঠে গেছে। ফলে আবার বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনেরও জন্য নির্বাচন কারা সুযোগ সৃষ্টি করেছে। গতকাল শুক্রবার (৪ এপ্রিল) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা ও ভুটানের ইতিবাচক সম্মতির পর এই সীমা তুলে দেয়া হয়। ২০২৬ সালের সাফ নির্বাচনের সময় কাজী সালাউদ্দিনের বয়স ৭২ বছর হবে, ফলে পূর্বের নিয়ম থাকলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন না। ২০০৯ সালে সাফের সভাপতি হওয়া সালাউদ্দিন টানা চারবার এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৬ সালে পুনরায় নির্বাচিত হলে এটি হবে তার সর্বশেষ মেয়াদ, কারণ সাফের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী টানা তিনবার বা সর্বমোট ১২ বছরের বেশি সময় নির্বাহী কমিটির কোনো পদে থাকা যাবে না। সাফের বিশেষ সভায় এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) সভাপতি শেখ সালমান উপস্থিত ছিলেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ান অঞ্চলে স্কুল ফুটবল উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ফুটবলের ধারাবাহিক বিকাশের জন্য শক্তিশালী ও স্থিতিশীল নেতৃত্ব অপরিহার্য এবং আমি বিশ্বাস করি যে এই কংগ্রেস এমন সিদ্ধান্ত নেবে যা এই অঞ্চলের ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্য সর্বোত্তম হবে। সভায় সাফ সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন এএফসি সভাপতি, শ্রীলংকা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি জাসওয়ার উমর এবং অংশগ্রহণকারী সদস্য সংস্থাগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এশিয়ার অন্যান্য দেশের সমকক্ষ হতে হলে আজকের শিশুদের আরও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিতে হবে। সাফ ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে এবং এই অঞ্চলের ফুটবলকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করবে, যাতে আমাদের শিশুদের প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা বাড়ে। এদিকে, চলতি বছরের জুনের শেষ সপ্তাহে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হবে। শ্রীলংকা ভেন্যু হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। সাফের মার্কেটিং পার্টনার স্পোর্টস ফাইভ কলম্বোর ভেন্যু পরিদর্শন করছে, তাই আজকের নির্বাহী সভায় ভেন্যু সংক্রান্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০০৮ সালে বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন। এর পরের বছরই সাফের সভাপতি হয়েছেন। ২০০৯ থেকে টানা চার বার তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল ফেডারেশনের পদে রয়েছেন। সাফের গঠনতন্ত্রের ৩১ অনুচ্ছেদের ৪ নম্বর ধারায় রয়েছে, নির্বাহী কমিটির যে কোনো পদ সভাপতিসহ টানা তিন বার বা সব মিলিয়ে তিন বার অথবা ১২ বছরের অধিক সময়কাল অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। এই সংশোধনী আনা হয় ২০২২ সালে। ফলে সালাউদ্দিনের ২০১৮-২২ সালের দায়িত্ব পালনের মেয়াদ এই আওতায় পড়েননি। ২০২৬ সালে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হলে এই আইনের আলোকে সেটাই হবে তার শেষ মেয়াদ। সাফের গঠনতন্ত্র সংশোধনে কাজী সালাউদ্দিনের নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি হলেও তবে এরপরও নির্ভর করছে অনেক যদি-কিন্তুর ওপর। কারণ সাফে নির্বাচন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের মনোনয়ন প্রয়োজন। বাফুফের মনোনয়ন না পেলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। আগামী বছর বাফুফে সালাউদ্দিনকে মনোনয়ন দেবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনে আঞ্চলিক সংস্থার ভোট নেই। সেখানে শুধু দেশের ফেডারেশনগুলো ভোট দিতে পারে। ফেডারেশনের পদে নেই এমন কাউকে সাফের শীর্ষ পদে রাখার বিষয়টিও এশিয়ার ফুটবলের প্রভাবশালীরা বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারেন। সাফের বিশেষ সভায় বিশেষভাবে আমন্ত্রিত ছিলেন এএফসির সভাপতি শেখ সালমান। তার বক্তব্যে তিনি দক্ষিণ এশিয়ান অঞ্চলে স্কুল ফুটবলের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সাফ অঞ্চলের বিভিন্ন ফেডারেশনের সভাপতি ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে সায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই সভায় বাফুফের প্রতিনিধি জাকির হোসেন চৌধুরী। চলতি বছরের জুনের শেষ সপ্তাহে সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এই টুর্নামেন্টের ভেন্যু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি ফেডারেশন। শ্রীলঙ্কা আগ্রহ প্রকাশ করলেও সাফের মার্কেটিং পার্টনার স্পোর্টস ফাইভ এখনো সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। কলম্বোর ভেন্যু পরিদর্শন করছেন তারা। তাই কংগ্রেসের পর নির্বাহী সভায় সাফের ভেন্যু নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি।