বিশ্ব ফুটবলে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছুঁয়েছে খেলোয়াড়দের কল্যাণে নেয়া এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ফুটবলারদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষায় ফিফা অবশেষে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ও খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিফপ্রো এর শীর্ষ নেতারা এই বিষয়ে একমত হন। বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি ম্যাচের মাঝে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টার বিরতি রাখতে হবে, প্রতি মৌসুম শেষে খেলোয়াড়দের অন্তত ২১ দিনের বাধ্যতামূলক পূর্ণ বিশ্রাম দিতে হবে। সপ্তাহে একদিন সম্পূর্ণ বিশ্রামের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে (যথাযথ শর্ত সাপেক্ষে)। ফিফা জানিয়েছে, এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো খেলোয়াড়দের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা।

এর পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ প্রেক্ষাপট। সম্প্রতি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে ৩২ দল নিয়ে নতুন ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। ইউরোপিয়ান মৌসুম শেষ হওয়ার পরপরই এই ঘোষণা আসায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। খেলোয়াড়, কোচ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন এই সিদ্ধান্তে ফুটবলারদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষা করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, ২০২৪ সালের জুনে ফিফপ্রো, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের খেলোয়াড় ইউনিয়ন মিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফিফার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। অভিযোগ ছিল খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরামর্শ না করে সময়সূচি নির্ধারণ করে ফিফা প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করেছে। ফিফপ্রো-এর পক্ষ থেকে এরপর দাবি তোলা হয়, প্রতি মৌসুম শেষে খেলোয়াড়দের অন্তত চার সপ্তাহের বাধ্যতামূলক ছুটি দিতে হবে। এসব দাবি ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই ফিফা অবশেষে আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ফুটবল ক্যালেন্ডারে ভারসাম্য আনতে রাজি হয়। বৈঠকে আরও আলোচিত হয়, ভবিষ্যতে ফুটবলারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো সিদ্ধান্তে ফিফার কাউন্সিল মিটিংয়ে পখলোয়াড় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ ফুটবলারদের দীর্ঘদিনের দাবিকে বাস্তবে রূপ দেয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। এটি শুধু খেলোয়াড়দের সুস্থতাই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।