জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ একেএম মারুফুল হক। দেশের একমাত্র উয়েফা এ লাইসেন্সধারী কোচ দেশের ফুটবলের নানা ইস্যুতে গঠনমূলক সমালোচনাও করেন। গত অর্ধ যুগ ঘরোয়া ফুটবলে কিংসের একচ্ছত্র সাফল্যের মধ্যেও মারুফুল হক নানা সমালোচনা করেছেন। সম্প্রতি জাতীয় দলে খেলোয়াড় না ছাড়া ইস্যুতে ফুটবলাঙ্গন বসুন্ধরা কিংসকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেও মারুফ কিংসের অবস্থানকে সমর্থন করছেন। আবাহনীর হেড কোচ মারুফুল হক বলেন, 'বসুন্ধরা কিংসের এই অবস্থানটা আইনত (৭২ ঘন্টা আগে ছাড়তে বাধ্য নয়), বাস্তবিক ও নানা দৃষ্টিকোণ থেকেই যৌক্তিক। একটা অফিসিয়াল টুর্নামেন্ট যেমন এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ হতো তখন ক্লাব খেলোয়াড় না ছাড়লে অযৌক্তিক হতো। দু’টি প্রীতি ম্যাচের জন্য প্রায় এক মাস জাতীয় দলের অনুশীলনের প্রয়োজন নেই।' বসুন্ধরা কিংসকে নিজের সমর্থনের পেছনে ট্যাকনিক্যাল ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'জাতীয় দলের অনুশীলন হচ্ছে ম্যাচ ট্রেনিং আর ক্লাবগুলোতে এখন প্রাক মৌসুম কন্ডিশনিং। খেলোয়াড়রা কন্ডিশনিং ট্রেনিং না করলে আগামী সাত-আট মাস ঘরোয়া মৌসুমে ইনজুরিতে পড়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। পাশাপাশি ফিটনেস ও পারফরম্যান্স উভয় প্রভাব পড়বে ব্যাপক।' ইনজুরি ঝুঁকি ও ফিটনেস-পারফরম্যান্স শঙ্কা জেনেও মারুফের ক্লাব আবাহনী জাতীয় ও অ-২৩ দল মিলিয়ে দশজন খেলোয়াড় দিয়েছে। দশজন খেলোয়াড় দেয়ায় আবাহনীর অনুশীলন বন্ধ। এই বিষয়ে কোচ মারুফের মত, 'ক্লাব যদি আমার মতামত চাইত তাহলে আমি অবশ্যই বলতাম খেলোয়াড়দের ক্লাবের কন্ডিশনিং করা প্রয়োজন। কন্ডিশনিং না হলে একটি মৌসুম পার করা খুবই দুঃসাধ্য। সারা আগস্ট জাতীয় দলে অনুশীলন করে নেপালে দুই ম্যাচ খেলে ১০ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ঘরোয়া মৌসুম শুরু হলে সেই খেলোয়াড় আর ক্লাবের প্রাক মৌসুম প্রস্তুতির সুযোগটা কোথায়? এরপর খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়লে কিংবা মৌসুমের মাঝপর্যায়ে ফিটনেস হারালে ক্ষতিগ্রস্ত তো ক্লাবই হবে।' ১৩ আগস্ট জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হয়েছে। ১৪ আগস্ট আবাহনী এর পরের দিন কিংসের খেলোয়াড় যোগ দেয়ার কথা ছিল। আবাহনী ফুটবলাররা যোগ দিলেও কিংসের ফুটবলাররা অবশ্য যোগ দেননি। এতে মাত্র ১২ জন নিয়ে অনুশীলন করেন ক্যাবরেরা। বাফুফে জরুরি সভা করে কিংসকে খেলোয়াড় ছাড়ার অনুরোধ জানায়। জাতীয় দলের সাবেক কোচের এক্ষেত্রে ভিন্ন মত, 'উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ফেডারেশন জাতীয় দলের ক্যাম্প স্থগিত করে আগস্টের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের শুরুতে পুনরায় নির্ধারণ করলে ক্লাব-জাতীয় দল ও ফুটবলারর সকলের জন্যই সুন্দর হতো।' সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ নেপালে দু’টি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। ১৩ আগস্ট সেই দুই ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি শুরু। এই দু’টি সিদ্ধান্ত যথাক্রমে দুই ও এক মাস আগেই নেয়া। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জাতীয় দল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যানও। তার ক্লাবের সাথে জাতীয় দলের পরিকল্পনা সাংঘর্ঘিক এটা জেনেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।

ইমরুল হাসান ক্লাব সভাপতি, জাতীয় দল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যানের পাশাপাশি লিগ কমিটির চেয়ারম্যানও। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার কথা। দলবদল শেষই হয়েছে ১৪ আগস্ট। এর আগের দিন থেকে জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হওয়ায় ক্লাবগুলোর প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ সেই অর্থে থাকেই না। ফেডারেশন, ক্লাব শীর্ষ কর্তাদের পাশাপাশি জাতীয় দলের হেড কোচ, ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর, প্রশাসনিক স্টাফদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে জাতীয় দলের ক্যাম্প ঘটনায়।