বাংলাদেশের ফুটবলে এখন নতুন জাগরণের হাওয়া। হামজা চৌধুরীর মতো আন্তর্জাতিক তারকার যোগদানে বদলে গেছে দৃশ্যপট, দর্শকও ফিরে এসেছে মাঠে। গত ৪ জুন ভুটান, ১০ জুন সিঙ্গাপুর এবং ৯ অক্টোবর হংকংয়ের বিপক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ দল। প্রতিটি ম্যাচেই ছিল দর্শকদের ঢল।কিন্তু মাঠে সাফল্যের গল্প থাকলেও, প্রশাসনিক দিক থেকে রয়ে গেছে প্রশ্ন। চার মাস পেরিয়ে গেলেও ভুটান ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুটি ম্যাচের আয়-ব্যয়ের হিসাব এখনো প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
১০ জুন সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর ১৪ জুন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে বাফুফে। সেখানে বাফুফে সভাপতি ও ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়াল এক সপ্তাহের মধ্যে হিসাব প্রকাশের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রয়ে গেছে কাগজেই। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার বিষয়টি উঠলেও বাফুফে কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে গেছেন।২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির সভায় এই দুই ম্যাচের আয়-ব্যয় একসঙ্গে উপস্থাপন করা হয়, যদিও দুটো ম্যাচের অর্থনৈতিক হিসাব আলাদা হওয়ার কথা ছিল। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একাধিক সদস্য। তারা অভিযোগ করেন, পুরো হিসাব তখনও অসম্পূর্ণ ছিল।
সভা শেষে বাফুফের মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাবু বলেছিলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভুটান ও সিঙ্গাপুর ম্যাচের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। কেউ যদি টাকা পায়, পরিশোধ করা হবে। আর আমরা যদি পাই, ফান্ডে যোগ হবে।’ কিন্তু এরপর কেটে গেছে মাসের পর মাস, কোনো হিসাব প্রকাশ পায়নি।২৬ অক্টোবর বাফুফের সর্বশেষ সভাতেও এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।ম্যাচ দুটি ঘিরে ছিল বিপুল আর্থিক প্রবাহ। টিকিট বিক্রি, স্পনসরশিপ, সম্প্রচার স্বত্ব ও স্টেডিয়ামের বিজ্ঞাপন থেকে এসেছে উল্লেখযোগ্য আয়। কিন্তু এসবের কোনো স্বচ্ছ হিসাব জানানো হয়নি গণমাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এমনকি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও (এনএসসি) এখনো পায়নি নিজেদের পাওনা অংশ।
নিয়ম অনুযায়ী, গেইট মানির ১০ শতাংশ, সম্প্রচার স্বত্বের ১৫ শতাংশ এবং মাঠে থাকা বিজ্ঞাপন বোর্ডের আয় থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের হিসাবে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু বাফুফে সেই টাকা পরিশোধ করেনি।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, ‘ফুটবল ফেডারেশনের কাছে গেইট মানিসহ অন্যান্য পাওনা টাকার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি, কিন্তু এখনো পাইনি। আশা করছি দ্রুতই তারা পরিশোধ করবে। ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা চাই তারা নিয়ম মেনে চলুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মাঠ বরাদ্দ দেই নির্দিষ্ট শর্তে, সেই শর্ত অনুযায়ী ক্রীড়া পরিষদকে নির্ধারিত অর্থ দিতে হয়। এটি না মানার সুযোগ নেই।’
নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য এবং তারা নিয়মিতই টাকা পরিশোধ করে। ‘ক্রিকেট বোর্ডের টাকা আমরা নিয়মিত পাচ্ছি। শেষ ম্যাচের কিছু বকেয়া আছে, সেটিও শিগগিরই পরিশোধ হবে বলে আশা করছি।’
ক্রীড়া পরিষদের হিসাবে ঠিক কত টাকা পাওনা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি, হংকং ম্যাচে টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি। সে হিসেবে গেইট মানির ১০ শতাংশ আমাদের প্রাপ্য। তবে আমরা এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব পাইনি।’ এ বিষয়ে জানতে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।