বার্সেলোনার ইতিহাসে লিওনেল মেসির নাম উচ্চারণ মানেই আবেগ, গৌরব আর ভালোবাসার প্রতীক। কাতালান ক্লাবটির হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডধারী এই আর্জেন্টাইন তারকা ২০২৩ সালের মাঝামাঝি ইউরোপ ছেড়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন। তবুও তার হৃদয়ে আজও জায়গা করে আছে বার্সেলোনা— এমনকি স্ত্রী অ্যান্তোনেলা রোকুজ্জো ও সন্তানদের সঙ্গেও প্রায়ই তিনি সেখানে ফেরা নিয়ে কথা বলেন।
তবে বার্সা ছাড়ার সময়টা ছিল মেসির জীবনের অন্যতম কঠিন অধ্যায়। ২০২১ সালে আর্থিক সংকটে ভোগা ক্লাবটি লা লিগার বেতনসীমার নিয়মের কারণে তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে পারেনি। অনেকে এর জন্য দায়ী করেন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাসকে, আবার কেউ কেউ ক্লাব সভাপতি হুয়ান লাপোর্তাকেও দোষারোপ করেন। অশ্রুসিক্ত সেই বিদায়ের পর প্রায় চার বছর কেটে গেছে, কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ সংস্কারাধীন ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে গিয়ে মেসি যেন পুরোনো স্মৃতিতে ভেসে গিয়েছিলেন।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম দারিও স্পোর্ত-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি সত্যিই বার্সেলোনায় ফিরতে চাই। আমরা সবাই—আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তানরা—সেখানে ফেরা নিয়ে প্রায়ই কথা বলি। ওখানেই আমাদের ঘর, ওখানেই আমাদের জীবন। সবকিছুই আছে সেখানে।
গত সপ্তাহে দুই বছর পর বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা প্রথমবারের মতো ক্যাম্প ন্যুতে অনুশীলনে নামেন। স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজ এখনো শেষ হয়নি, মাথার ওপরে ক্রেন ঘুরছে, তবু তা দেখতে হাজির হয়েছিলেন ২০ হাজারেরও বেশি দর্শক। মেসিও নীরবে স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন বার্তা দেন, যা নতুন করে উচ্ছ্বসিত করেছে কাতালান সমর্থকদের।
মেসি বলেন, প্যারিসে যাওয়ার পর আর ক্যাম্প ন্যুতে যাওয়া হয়নি। তাই কাজ শেষ হওয়ার পর এখানে ফিরে আসার ইচ্ছা ছিল। নতুন স্টেডিয়াম দেখে মনে হচ্ছে, সময় কত দ্রুত চলে গেছে। জায়গাটা অনেক বদলে গেলেও প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে পুরোনো স্মৃতি।
বিদায়ের সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে ৩৮ বছর বয়সী এই তারকা আরও বলেন, আমি অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে বার্সেলোনা ছেড়েছিলাম। শেষ মৌসুমে করোনা মহামারির কারণে দর্শকশূন্য মাঠে খেলেছি। প্রায় পুরো জীবন এখানে কাটানোর পর এমনভাবে বিদায় নিতে হবে—এটা কখনো কল্পনাও করিনি। এখনো মনে করি, বার্সেলোনার সমর্থকদের ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।
মেসির ফুটবল জীবনের শুরুই হয়েছিল বার্সেলোনার বিখ্যাত যুব একাডেমি ‘লা মাসিয়া’তে। সেখানে কৈশোর, যৌবন আর প্রাপ্তবয়স্কতা—সবই কাটিয়েছেন কাতালানদের ঘরে। তিনি বলেন, এই ক্লাব আমাকে মানুষ করেছে। শৈশব থেকে বড় হওয়া, পরিবার গঠন—সবই ঘটেছে বার্সেলোনায়। সেই কারণেই জায়গাটা আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে বার্সেলোনার মূল দলে অভিষেক হয় মেসির। ১৭ বছর দীর্ঘ সেই অধ্যায়ে ক্লাবটির জার্সিতে তিনি খেলেছেন ৭৭৮ ম্যাচ, করেছেন ৬৭২ গোল এবং জিতেছেন ৩৫টি ট্রফি—এর মধ্যে রয়েছে ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ১০টি লা লিগা শিরোপা।
মেসির ভাষায়, বার্সেলোনা শুধু আমার ক্যারিয়ারের অংশ নয়—এটা আমার ঘর।