এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাঁচ দিনের ব্যবধানে আবারও হংকং চায়নার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। বাছাই পর্ব অতিক্রম করতে জয় বিকল্প নেই লাল সবুজ দলটির। আজ মঙ্গলবার হংকংয়ের কাই তাক স্পোর্টস পার্ক মেইন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টায় শুরু হবে দুই দেশের ফিরতি ম্যাচটি। গত ৯ অক্টোবর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ৭ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে হংকং জিতেছিল ৪-৩ ব্যবধানে। নাটকীয় ম্যাচে দুই দলের শেষ দুটি গোলই হয়েছে ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটে।

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে এটি হবে দুই দলেরই চতুর্থ ম্যাচ। তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে হংকং। সমান ম্যাচে দুই হার ও এক ড্রয়ে বাংলাদেশ ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ম্যাচে হংকংয়ের কাছে হারের পর বাংলাদেশ কার্যত ছিটকে গেছে চূড়ান্ত পর্বে ওঠার লড়াই থেকে।

শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে হংকং এগিয়ে। বাংলাদেশের চেয়ে ৩৮ ধাপ এগিয়ে পূর্ব এশিয়ার দেশটি। মাঠের লড়াইয়েও বারবার এই পার্থক্য প্রমান করেছে হংকং। বাংলাদেশের কাছে কখনো মাথা নত করেনি তারা। পাঁচবারের সাক্ষাতের চারবারই জয় দিয়ে মাঠ ছেড়েছে হংকং। একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।

এ দেশটির বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচটি ছিল তীক্ততায় ভরা। ১৯৭৫ সালের মারদেকা কাপে বাংলাদেশের জালে গুনেগুনে ৯ গোল দিয়েছেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একটি গোল শোধ করতে পেরেছিল। যদিও ২৮ বছর পর দ্বিতীয় দেখায় ৯-১ গোলের হার থেকে ফলাফল ২-২ এ নামিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচটির ওই ড্র এখন পর্যন্ত হকংয়ের বিপক্ষে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের সেরা ফলাফল।

বাংলাদেশের ফুটবলামোদীরা পাঁচ দিন আগে ঢাকায় হওয়া ম্যাচটি মনে রাখবেন দীর্ঘ সময়। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের রোমাঞ্চর ম্যাচগুলোর তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবে ঢাকার এই ম্যাচটি। বাঁচামরার লড়াইয়ে বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরেছে কিছু ভুলের জন্য। কোচের একাদশ গড়া থেকে যে ভুল শুরু হয়েছিল তার পরিণতি ছিলে শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তেও। ইনজুরি সময়ে গোল করে নাটকীয়ভাবে ড্রয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই হতাশার গল্প লিখে ফেলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কোচের উদাসীনতা ও রক্ষণের আমার্জনীয় ব্যর্থতায় বাংলাদেশের গৌরবের একটি পয়েন্ট হাতছাড়া হয়।

ঢাকা ম্যাচ থেকে কোনো শিক্ষা নেবেন কোচ ক্যাবরেরা? ঢাকার ম্যাচের পর সমালোচনার সব তীর ছুটেছে ক্যাবরেরার দিকে। দেশের কোচ, সাবেক-বর্তমান ফুটবলাররা তীব্র সমালোচনা করেছেন কোচের কৌশলের। এমন কি তৃতীয় গোলের পর বাংলাদেশের খেলোয়ড়রা ও কোচিং স্টাফ যেভাবে উদযাপন করেছেন সেটা অপেশাদারিত্বের ছাপ ছিল বলেই অনেকে মন্তব্য করছেন। ৩০-৪০ সেকেন্ড রক্ষণ জমাট রাখতে না পারার কারণ হিসেবে খেলোয়াড় ও কোচের বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসকেই দায়ী করছেন। সেখানে খেলোয়াড়দের মনযোগ নষ্ট হয়েছিল। কোচ খেলোয়াড়দের ঠিকমতো গাইড তো করতে পারেনইনি, উল্টো তিনিও গাঁ ভাসিয়েছেন গড্ডালিকা প্রবাহে।

একাদশ নির্বাচন নিয়ে হয়েছে তীব্র সমালোচনা। আর এই সমালোচনার পালে বাতাস লেগেছে যখন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি সবাই ভালো খেলেছেন। সমর্থক থেকে শুরু করে ফুটবলবোদ্ধাদের অনেকই মনে করেন দ্বিতীয়ার্ধে যে দলটি খেলেছেন সেটাই হওয়া উচিত ছিল প্রথম একাদশ।

তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন দল মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ ক্যাবরেরা ও খেলোয়াড়দের ভুলগুলো নিয়ে সমালোচনা করলেও দ্বিতীয়ার্ধে নেমে যারা ভালো খেলেছেন তাদের দিয়ে একাদশ গড়ার পক্ষে নন। এখানে তিনি জোর দিয়েই বলছেন,’একজন কোচই জানেন তার কোন খেলোয়াড়কে কোন সময় ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় দলের সেরা অস্ত্রটাকেও রিজার্ভ রাখতে হয় বলে মনে করেন আলফাজ। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে যে খেলোযাড় হ্যাটট্রিক করলেন সেই রাফায়েলকে কিন্তু হংকং কোচ দ্বিতীয়ার্ধে নামিয়েছেন। এটা একটা কৌশল।’

আলফাজ মনে করেন ‘ঢাকায় যেভাবে একাদশ সাজিয়েছিলেন ক্যাবরেরা হংকংয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোচ চাইলে সেখানে পরিবর্তন আনতে পারনে। এই যে কয়েকদিন অনুশীলন হলো। সেখানে কোন খেলোয়াড় কেমন করেছেন সেটা তো কোচই ভালো বুঝবেন। তাই তিনি সেভাবেই দল সাজাবেন। ঢাকায় যে ছোটখাটো ভুলগুলো হয়েছে সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ঘরের মাঠে খেল-হংকংয়ের ওপর দর্শকের একটা চাপ থাকবে। বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে আছে তাতে হারানোর কিছু নেই। তাই সেভাবেই খেলতে হবে।’

বাংলাদেশ-হংকং পাঁচ ম্যাচ

১০.৮.১৯৭৫ : হংকং-৯ : বাংলাদেশ-১, মারদেকা কাপ

৩০.৩.২০০৩ : হংকং-২ : বাংলাদেশ-২, এশিয়ান কাপ বাছাই

০১.৩.২০০৬ : বাংলাদেশ-০ : হংকং-১, এশিয়ান কাপ বাছাই

১৫.১১.২০০৬ : হংকং-২ : বাংলাদেশ-০, এশিয়ান কাপ বাছাই

০৯.১০.২০২৫ : বাংলাদেশ-৩ : হংকং-৪, এশিয়ান কাপ বাছাই