ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলতে নেপালে গিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কাঠমান্ডুতে আটকা পড়া বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যরা অবশেষে দেশে ফিরেছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে করে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলা এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে জামাল ভূঁইয়াদের বহনকারী বিমানটি অবতরণ করেছে। তাদের সঙ্গে একই বিমানে দেশে ফিরেছেন খেলা কাভার করতে যাওয়া ক্রীড়া সাংবাদিকরাও। উল্লেখ্য নেপালে ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কাঠমান্ডুর হোটেলে আটকা পড়েছিলেন ফুটবলাররা। ৯ সেপ্টেম্বর তাই ম্যাচই খেলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি বাতিল করতে হয়েছে। কাঠমান্ডু থেকে আসা সবাইকে অভ্যর্থনা জানাতে উপ¯ি’ত ছিলেন বিমান, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাফুফে সভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। উল্লেখ্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেপালে সরকার পতন হয়। কাঠমান্ডু জুড়ে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ফুটবল দল কাঠমান্ডুতে যে হোটেলে ছিল তার পাশেও আগুন জ্বলছিল। এতে ফুটবলাররা খানিকটা শঙ্কায় ছিলেন। দুই-তিন দিন হোটেল বন্দি থাকায় মানকিভাবেও ছিলেন বিপর্যস্ত। ফুটবলারদের ট্রমা কাটানোর বিষয়ে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসার প্রক্রিয়া রয়েছে। সেখানে অবশ্যই আমরা মানসিক কোচিং, সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট দেবো যাদের প্রয়োজন হয়। যাদের লাগবে না তাদেরও আমরা অ্যাসেসমেন্ট করব কারণ অনেক সময় এ রকম পরিস্থিতিতে ফিজিক্যাল শক হয়। আমরা এই বিষয়ে সচেতন রয়েছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত ছিল ফুটবলারদের বিশেষভাবে চিকিৎসাজনিত কিছু প্রয়োজন হলে।’ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুরো নেপাল ছিল উত্তাল। দুই দলের নিরাপত্তা বিবেচনায় দ্বিতীয় ম্যাচ হয়নি। তবে কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে শঙ্কা ছিল বাংলাদেশ দলের নিরাপত্তা নিয়েও। বাফুফে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দলের আবাসন নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিকল্পনা ভেবে রেখেছিল, ‘আমাদের টিম হোটেলের পাশে আগুন লেগেছিল। আমরা কিন্তু আগেই আমাদের টিমের জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় লোকেশন ঠিক করে রেখেছিলাম।’ খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও কর্মকর্তা মিলিয়ে ৩৭ জন ছিলেন কাঠমান্ডুতে। নেপালে ফুটবল ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া ১৭ জন সাংবাদিককেও বাফুফে বিশেষ বিমানের তালিকায় রেখেছে। এ নিয়ে ফেডারেশন সভাপতি বলেন, ‘সবাই মিলে আমরা ফুটবল ও ক্রীড়া পরিবার। শুধু ২৩ জন ফুটবলার নন, মিডিয়াসহ সবাইকে নিয়েই আমরা ফুটবলাঙ্গন। যখন আমরা রেসকিউ মিশনের পরিকল্পনা করেছি তখন কাঠমান্ডুতে থাকা মিডিয়ার ভাই-বোনদের নিয়েই কাজ করেছি।’ এর আগে বুধবার বিকেলের দিকে কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট সচল হয়েছে। বাণিজ্যিক ফ্লাইট সীমিত আকারে চলছে। কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট সচল হওয়ার ২০ ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশ দল ও ক্রীড়া সাংবাদিকরা ঢাকায় পৌঁছানোর জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাফুফে সভাপতি, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ দূতাবাস কাঠমান্ডুর সবাই আন্তরিকভাবে সহায়তা করেছে। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, আর্মি এবং আর্মড ফোসর্ডকে যারা সফলভাবে কাঠমান্ডু থেকে সবাইকে নিয়ে দেশে নিয়ে এসেছে।’ আর্মড ফোর্সড ডিভিশনের ডিজি অপারেশন্স এন্ড প্ল্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আলীম নিরাপদে দেশ প্রত্যাবর্তনের এই মিশনে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। আগামীতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশ ও জনগণের যে কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আত্মনিয়োগের জন্য সদা অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও জানান।