হামজা চৌধুরীর অবয়বে ক্লান্তির লেশ মাত্র নেই। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছেন। ছবি তুলছেন। একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় হলে যা হয়। বাংলাদেশের হবিগঞ্জের স্নানঘাটের গ্রামে তার নাঁড়ি পোঁতা। তারই টানে ২৭ বছর বয়সে এসেছেন খেলতে। তাই হামজাকে নিয়ে উন্মাদনা আকাশছোঁয়া। বাংলাদেশের হয়ে সামনের দিনগুলোতে মাঠে লড়াই করার পাশাপাশি কয়েক বছর খেলার কথাও সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের হার-জিতের সঙ্গে আপনার হার-জিত জড়িত, বিষয়টি অতিরিক্ত চাপের কিনা আপনার জন্য- এমন প্রশ্নের শুরুতেই তিনি দিলেন ‘না’ সূচক উত্তর। নির্ভার থেকে জাতীয় দলে খেলবেন হামজা, ‘না, আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি, দিন শেষে আমরা একটা ফুটবল ম্যাচই খেলছি। সেখানে যেকোনও কিছুই হতে পারে। কোচ বলেছেন, ইতিমধ্যে তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন, আমি এখানে এসেছি, আমি যা পারি, তা দলে যুক্ত করার জন্য। আমি কোনও চাপ অনুভব করছি না, আমি অনেক ভালোবাসা অনুভব করছি। আমার দিক থেকে, আমি চেষ্টা করবো যতটা সম্ভব দলের উন্নতিতে সহায়তা করার।’ দলকে নিয়ে বেশ আশাবাদী এই মিডফিল্ডার, ‘(নিজের কাছেও) আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। তবে আমি খুব আশাবাদী এবং ভীষণ রোমাঞ্চিত। কয়েক সপ্তাহ ধরে কোচ এটা নিয়ে কথা বলেছেন, অনেক ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছেন, দলের ট্যাকটিক্যাল দিক এবং দল যেভাবে আক্রমণ করে তা দেখে বিস্মিত হয়েছি। আমি আশা করছি, দলে আমি কিছু যোগ করতে পারবো। আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। আমি ভিন্ন একটা লিগ থেকে এসেছি, ভিন্ন ঘরানার ফুটবল খেলি। এই ছেলেরা, যেমন জামাল আছে, সে দলের অধিনায়ক, আন্তর্জাতিক ফুটবলে অনেক বেশি অভিজ্ঞ, এখানে অনেক দিন ধরে আছে। আমি এখানে তাদের কাছ থেকেও শিখতে পারবো। যেটা বলছিলাম, ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবো। আর আমরা একবারে একটা পদক্ষেপ ফেলতে চাই।’
কোচের কৌশলে সন্তুষ্ট হামজা। ভারত ম্যাচের প্রস্তুতি নিয়েও চিন্তিত নন তিনি। হাভিয়ের কাবরেরার ট্যাকটিকস নিয়েও আত্মবিশ্বাসী, ‘খুবই আত্মবিশ্বাসী (কোচের কৌশল নিয়ে)। খুব, খুব আত্মবিশ্বাসী। আগেও যেটা বললাম, দল কী করে, এর অনেক ভিডিও ক্লিপ তিনি আমাকে দেখিয়েছেন। তার ভাবনার কথা বলেছেন। আমি এর অংশ হতে দলকে সাহায্য করতে উন্মুখ।’ ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছু দেখা যাবে আশা তার, ‘(প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলা নিয়ে) আমি মনে করি, কোচ এবং সভাপতিই সবচেয়ে ভালো জানেন। তাদের সিদ্ধান্তগুলো হয় দলের সবচেয়ে ভালোর জন্যই। আপনি যেমন বললেন, উন্মাদনা ছিল। পর্দার আড়ালে দল কঠোর পরিশ্রম করছে। তাই এটা হয়তো ভালো হয়েছে যে আমি স্পটলাইট ওদের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। তারা কতটা পরিশ্রম করছে এবং কতটা ভালো করছে সেটা ২৫ তারিখেই আপনারা দেখবেন।’
সাবেক ক্লাব লিস্টার সিটি ও বাংলাদেশের মধ্যে মিল খুঁজে পান হামজা, ‘হ্যাঁ, অনেকটাই (লেস্টার সিটি ও বাংলাদেশের মিল)। অবশ্যই, যখন সময় আসবে, আমি আমার অভিজ্ঞতা এবং গল্প ভাগাভাগি করবো। যেটা বলছিলাম, লিস্টারের গল্প অন্যরকম গল্প। তবে একটা জাতি হিসেবে আমরাও দারুণ, আমাদেরও সম্ভাবনা আছে, আমরাও কিছু অর্জন করতে পারি, এজন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করতে হবে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে অনেক বছর খেলবো আমি। অবশ্যই এই গল্পে অনেক মিল রয়েছে।’ ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারেন হামজা, এমন কথা শোনা যাচ্ছিল। সেক্ষেত্রে সেই সুযোগ না নিয়ে বাংলাদেশকে বেছে নিতেন কিনা প্রশ্নে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি সবসময়ই বাংলাদেশের হয়ে খেলার কথা ভেবেছি। এ নিয়ে আমি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে (ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেলেও বাংলাদেশের হয়ে খেলতাম কিনা) এই সিদ্ধান্ত আমার নিতে হয়নি। আমার যখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এলো, তখন পরিবারের সঙ্গে কথা বললাম, তারা আমার জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার। তারাই বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য আমাকে এখানে টেনে নিয়ে এলো (হাসি)।’ বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার ব্যাখ্যা, ‘অনেকগুলো বিষয় ছিল, যে কারণে আমি এই অপশন বেছে নিয়েছি। যখন নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন, পরিকল্পনা জানালেন, আমি কোচের সঙ্গে কথা বললাম। দেখলাম এখানে একটি ভালো পদ্ধতি আছে। দেখলাম খুব ভালো একটি অর্গানাইজেশন নিয়ে একটা দল সফল হতে চায়। আমি জানতাম, আমার জন্যও পরিবার নিয়ে এখানে এসে খেলা আরামদায়ক। তাই আমি জাতীয় দলের সঙ্গে এই অভিযানে যোগ দিয়েছি। কোচ ও সভাপতি আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন।’