আজারবাইজান ঢাকায় এসেছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতি নিতে। উইমেন’স এশিয়া কাপের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার মূল লক্ষ্য সী গেমসের আগে নিজেদের গুছিয়ে নেয়া। জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় কাপ তাই তিন কোচের জন্য নিজেদের পরখ করে নেয়ার মঞ্চ হয়ে উঠেছে। তিনজনই বললেন সুযোগটি লুফে নেয়ার কথা। জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এই প্রতিযোগিতা। শনিবার মুখোমুখি হবে আজারবাইজান ও মালয়েশিয়া। ২ ডিসেম্বর আজারবাইজানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। আগামী মার্চের এশিয়ান কাপের প্রস্তুতি বেশ কিছুদিন ধরেই আটঘাঁট বেঁধে নিচ্ছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেডে পিটার জেমস বাটলারের কোচিংয়ে চলছে অনুশীলন। গত অক্টোবরে থাইল্যান্ড সফরের আগেও সেখানে ক্যাম্প করেছিল দল। সফর শেষ করে ফিরে সেখানেই চলেছে ক্যাম্প। ত্রিদেশীয় কাপ খেলতে চট্টগ্রাম থেকে রোববার ঢাকায় এসেছেন আফঈদা-ঋতুপর্ণারা।
টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি ও লক্ষ্যের চেয়ে বাটলার অবশ্য বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন তার হাই-লাইন ডিফেন্স কৌশল নিয়ে। যে ছকে থাইল্যান্ড সফরে হয়েছিল ভরাডুবি, দুই ম্যাচে যথাক্রমে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩-০ ও ৫-১ গোলে। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বরাবরের মতোই দৃঢ় কণ্ঠে সবকিছুতে নিজের পরিকল্পনায় অটল থাকার কথা বললেন বাটলার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে (১০৪) আজারবাইজান ও মালয়েশিয়ার এগিয়ে থাকা নিয়ে ভাবছেন না এই ইংলিশ কোচ।
“আমি মনে করি, র্যাঙ্কিং অনেক কিছু আড়াল করতে পারে এবং আমি বিশ্বাস করি, র্যাঙ্কিং কোনো বিষয় নয়। আমি বলতে চাইছি, মালয়েশিয়া এখানে ৯২ এবং আজারবাইজান ৭৪তম র্যাঙ্কিং নিয়ে এসেছে, কিন্তু আমি বাস্তববাদী, আমি কোনোভাবেই আমার পরিকল্পনা থেকে সরব না, যেমন আমাদের দলে অনূর্ধ্ব-১৭, ২০ দলের খেলোয়াড় আছে।” “উত্থান-পতন যাই হোক, আমরা জিতি বা হারি কিংবা ড্র করি, যে পরিকল্পনা আমাদেরকে অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ, এশিয়ান কাপের মঞ্চে নিয়ে গেছে, সেটা চালিয়ে যাব। মেয়েরা চমৎকার করছে। আপনারা হাই-লাইন ডিফেন্স নিয়ে যত খুশি কথা বলতে পারেন, এটা ব্যাখ্যা করার বিষয়, আপনারা জানেন ফুটবলের সাথে দীর্ঘদিন আছি এবং আমি মনে করি, আপনারা যেটা উপলব্ধি করেন, সেটা একান্তই আপনাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি।” অস্ট্রেলিয়াতে হতে যাওয়া এশিয়ান কাপ যে সব পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে, স্পষ্ট করেই বললেন বাটলার। ত্রিদেশীয় কাপে দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার বার্তাও দিলেন তিনি।
“আমরা বড় দল নই। সম্ভবত মালয়েশিয়ার মতোই। আপনারা জানেন আজারবাইজান শারীরিকভাবে শক্তিশালী দল, তবে আমাদের এশিয়ান কাপে উত্তর কোরিয়া, চীনের মতো শক্তিশালী এবং র্যাঙ্কিংয়ে উপরে থাকা দলের বিপক্ষে খেলতে হবে। আপনারাও জানেন, আমরা বিছানায় গিয়ে বেড়ে ওঠার ব্যাগে পা গলিয়ে ঘুমাব, আর সকালে ছয় ইঞ্চি লম্বা হয়ে যাব, জীবন এভাবে কাজ করে না। আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।” “সম্প্রতি আমরা থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ভিন্ন ধাঁচের ফুটবল খেলেছি। ভালো একটা প্রস্তুতি হয়েছে। আপনারাও জানেন, অস্ট্রেলিয়াতে আমাদের পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। সেখানে যেতে পারাও একটা সাফল্য। তবে, আমাদের একটা লক্ষ্য নিয়ে সেখানে যেতে হবে।” মালয়েশিয়া কোচ জোয়েল কর্নেলি লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে বললেন সী গেমসের আগে ঝালিয়ে নিতে চান নিজেদের। প্রশংসা করলেন প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের।
“এই টুর্নামেন্ট আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সী গেমসের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্টে আমাদের খেলতে হবে। এ কারণে এখানে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলা আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা র্যাঙ্কিংয়ে ৭৪তম স্থানে আছি, তবে আমরা বাংলাদেশকে জানি, অনেক তরুণ খেলোয়াড় নিয়ে অবশ্যই ওরা শক্তিশালী দল। আশা করি, টুর্নামেন্টটা আমরা উপভোগ করতে পারব এবং সী গেমসের প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে পারব।এই টুর্নামেন্টের লক্ষ্য, বাংলাদেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া, বর্তমান দলের অবস্থানসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন আজারবাইজান কোচ সিয়াসাত আসগারোভ। সেখানে অবশ্য প্রাধান্য পেল আগামী জুনের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের উয়েফা লিগ সি-র ম্যাচগুলো। “আমরা বাংলাদেশের সবশেষ ম্যাচগুলো দেখেছি। ওদের নিয়ে খবর পড়েছি এবং নারী ফুটবল নিয়ে এই দেশের আগ্রহ সম্পর্কে জেনেছি। বাংলাদেশ উইমেন’স এশিয়ান কাপ ও উইমেন’স অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপে অংশ নেবে। এই আসর দিয়ে আমরাও বিশেষ প্রস্তুতি নেব বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য। এখান থেকেই আমাদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ক্যাম্প এবং প্রস্তুতি শুরু হবে।”