হংকংয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ম্যাচ হারার পর থেকে এই দুই দিন ফুটবল অঙ্গনে আলোচনা একটাই- আর কতদিন হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরাকে রাখবে বাফুফে? অনেকে প্রশ্ন করছেন, ‘জয় এনে দিতে না পারলে ভালোখেলার ধোঁয়া তুলে আর কতদিন এই কোচকে রাখব?’ এটা কেবল হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পরই নয়, ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের পর ফুটবল দর্শকরা ক্যাবরেরার মুণ্ডুপাত করেছিলেন। যেখানেই ক্যাবরেরাকে দেখেছেন ফুটবলামোদীরা তাকে দুয়োধ্বনি দিয়েছেন।এমনকি বাফুফের অভ্যন্তরেই ক্যাবরেরাকে নিয়ে আছে বিস্তর আলোচনা। বাফুফের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন শাহিন তো বাফুফে সভাপতির সামনে ক্যাবরেরার পদত্যাগ চেয়ে ন্যাশনাল টিমস কমিটির সদস্যপদও হারিয়েছেন।নিজের পরিচয় গোপন রেখে বাফুফের নির্বাহী কমিটির অনেক সদস্যই ক্যাবরেরাকে না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। এমনকি বাফুফের কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল ও আন অফিসিয়াল আলোচনায়ও উঠে এসেছে ক্যাবরেরা-প্রসঙ্গ। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ন্যাশনাল টিমস কমিটিরও চেয়ারম্যান। তাই জাতীয় দলের প্রধান কোচ কে থাকবেন, কে থাকবেন না সেটা তার সিদ্ধান্তের ওপরই বেশি নির্ভর করে।
বাফুফের ভেতরে-বাইরে, দর্শক-সমর্থক, সাবেক-বর্তমান ফুটবলার এবং গণমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে হংকংয়ের ম্যাচের পর এটাই একমাত্র আলোচনা। হংকংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচটি হারার দায় কার? এই বিশ্লেষণে সবাই সমালোচনার তীর ছুড়ছেন ক্যাবরেরার দিকে। তার একাদশ গড়ায় কোনো পরিপক্কতা ছিল না বলেই সম্ভাবনা থাকার পরও বাংলাদেশ হেরে গেছে ঘরের ম্যাচে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেয়ার পর চুক্তি নবায়ন করে করে তিন বছর অতিক্রম করে এখন চতুর্থ বছরের দায়িত্ব পালন করেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী ক্যাবরেরা বাংলাদেশের কোচ থাকবেন আগামী বছর মার্চ পর্যন্ত। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ হারার পরই ক্যাবরেরাকে বিদায়ের আলোচনা উঠেছিল জোরেসোরে। আলোচনা উঠেছিল বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটির সভায়ও। তবে সভাপতি সবাইকে বলেছেন, কোচ খুঁজতে। তিনিও খুঁজছেন।কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘চেয়ারম্যান সবাইকেই ভালো কোচ খুঁজতে বলেছেন। আমরা তো ভালো কোচ পাচ্ছি না। সভাপতির কথা হলো একজন ভালো বিকল্প খুঁজে তারপরতো কোচ না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
কমিটির ওই সদস্যের মতে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ক্যাবরেরা পাট চুকিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা কম। হংকংয়ের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচের পর খেলা বাকি থাকবে দুটি। ১৪ অক্টোবর হংকং আর ১৮ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হয়ে গেলে বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ থাকবে একটি। আগামী বছর মার্চে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে এশিয়ান কাপ বাছাই মিশন।তিন ম্যাচের দুটি হার, একটি ড্র-সম্ভাবনা তো কার্যত শেষ। তাহলে আর মাঝপথে কোচ বিদায় করে লাভ কি? এমন চিন্তাভাবনাই বাফুফে করছে। চারিদিক থেকে সমালোচনা যতই আসুক, বাফুফে হাঁটছে নিজেদের মতো করেই। ব্যর্থতার জন্য সবাই কোচ ক্যাবরেরাকে দায়ী করলেও বাফুফে তাকে মেয়াদ পর্যন্ত রেখে দেয়ার ক্ষেত্রে অনড় বলেই মনে হচ্ছে।
হংকংয়ের বিপক্ষে প্রথমার্ধে মাঠে ১১ ফুটবলার থাকলেও অনেকের মনে করছেন বাংলাদেশ যেন ৩ ফুটবলার কম নিয়েই খেলেছেন। মাঠে সাদ উদ্দিন ও দুই সোহেল রানার কী কাজ ছিল, তা অনেকের কাছে বোধগম্য নয়। তার ওপর সোহেল রানা ছিলেন অধিনায়কের দায়িত্বে। মাঠে দেখা গেছে দলের সবাইকে উদ্ধুদ্ধ করছেন হামজা চৌধুরী। নিচে খেলছেন, মাঝে খেলছেন এবং ওপরেও খেলছেন। আক্রমণের গাঁথুনি তৈরি করেছেন, গোল করেছেন। মাঠে তিনিই মূলত নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে।তাহলে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড কেন পেলেন সোহেল রানা? সাবেক-বর্তমান অনেক খেলোয়াড়রই দাবি তুলেছেন এখন থেকে অধিনায়কের দায়িত্বটা হামজা চৌধুরীকে দেয়া হোক।