বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের আয়োজনে 'তারুণ্যের উৎসব'কে সামনে রেখে দেশের সব জেলার অংশগ্রহণে আগামী ২৯ জুলাই শুরু হবে জাতীয় কাবাডি (পুরুষ ও নারী) চ্যাম্পিয়নশিপ। এদিকে দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রুপালিকে অধিনায়ক করে ভারতের হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিতব্য নারী কাবাডি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন। শনিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ) ভবনের ডাচ বাংলা অডিটোরিয়ামে কাবাডি ফেডারেশন আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম এনডিসি, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হক এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পুলিশের ডিআইজি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

জাতীয় কাবাডি (পুরুষ ও নারী) চ্যাম্পিয়নশিপকে আটটি জোনে ভাগ করা হয়েছে, প্রতিটি জোনে রয়েছে আটটি করে জেলা। জোনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর নামে: পদ্মা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, রুপসা, ধানসিঁড়ি, সুরমা এবং মধুমতি। পদ্মা জোন দিয়ে জোনাল পর্যায়ের খেলা শুরু হবে এবং মধুমতি জোন দিয়ে তা শেষ হবে। প্রতিটি জোনের খেলার জন্য নির্দিষ্ট ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে। পদ্মা জোনের বগুড়া জেলা, তিস্তা জোনের রংপুর জেলা, ব্রহ্মপুত্র জোনের টাঙ্গাইল জেলা, কর্ণফুলী জোনের কুমিল্লা জেলা।রুপসা জোনের যশোর জেলা, ধানসিঁড়ি জোনের বরিশাল জেলা, সুরমা জোনের সিলেট জেলা ও মধুমতি জোনের গোপালগঞ্জের বাংলাদেশ ন্যাশনাল কাবাডি একাডেমি।

জোনাল পর্যায়ের খেলা শেষে প্রতিটি জোনের বিজায়ী দল নিয়ে হবে আন্তজলা চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখান থেকে সেমিফাইনালিস্ট চারটি দল সার্ভিসেস দলের সাথে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবে। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ বলেন, 'এই চ্যাম্পিয়নশিপ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নতুন কাবাডি খেলোড়াদের প্রতিভা অন্বেষণে সহায়ক হবে এবং কাবাডিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।' এদিকে ১৩ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারী কাবাডি বিশ্বকাপ। আগামী ৩ থেকে ১০ আগস্ট ভারতের হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিতব্য এই আসরের জন্য রুপালি সিনিয়ারকে অধিনায়ক করে ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দল ঘোষণা করেছে কাবাডি ফেডারেশন। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ বলেন, 'আমাদের কাবাডি নারী দলে অনেক খেলোয়াড় অনেক দিন ধরে সার্ভিস দিচ্ছে। তেমনি একজন হচ্ছে সিনিয়র রুপালি। এ বিশ্বকাপের মাঝেই সে কাবাডিকে বিদায় জানাবে। অধিনায়ক করে আমরা তাকে সম্মানিত করতে চাই।'

বাংলাদেশ নারী কাবাডি দলের সদস্যরা হচ্ছেন রুপালি (সিনিয়র) অধিনায়ক, শ্রাবনী মল্লিক, বৃষ্টি বিশ্বাস, মোছা: স্মৃতি আক্তার, রেখা আক্তারী, মেবি চাকমা, রুপালি আক্তার (জুনিয়র), দিশা মনি সরকার, সুচরিতা চাকমা, খাদিজা খাতুন, লোবা আক্তার, তাহরিম, মোছা: ইসরাত জাহান সাদিকা, আঞ্জুআরা রাত্রি, স্ট্যান্ড বাই প্লেয়ার লাকি আক্তার। কোচ শাহনাজ পারভীন মালেকা ও আরদুজ্জামান মুন্সী। ম্যানেজার মনির হোসাইন ও ইন্টারন্যাশনাল টেকনিক্যাল অফিসিয়াল স্বপন খান। বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন দল ঘোষণা করলেও দুঃখের বিষয় স্থগিত হয়েছে নারী কাবাডি বিশ্বকাপ। গতকাল বিকেল তিনটা দশ মিনিটে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের কাছে পাঠানো মেইলে জানানো হয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো টিম কন্টিনজেন্ট বিবরণ সময়মতো জমা না দেয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পেতে সময় লেগেছে। এর ফলে নারী কাবাডি বিশ্বকাপ স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্বকাপের নতুন তারিখ পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে।

এদিকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ২০ বছরের জন্য গোপালগঞ্জ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের অনুকূলে লীজ প্রদান করেছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা গোপালগঞ্জ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স কাবাডি ফেডারেশনকে লীজ প্রদান করেছি। তারা আগ্রহী ছিল। তাই তাদেরকে দেয়া হয়েছে। যে কোন ফেডারেশন এরকম ক্রীড়া কমপ্লেক্স করার জন্য আবেদন করলে আমরা ঢাকার বাইরে দিতে আগ্রহী। ইতিবাচক ধারণা নিয়েই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ বলেন, '১২ একর জমির উপর প্রস্তাবিত কাবাডি কমপ্লেক্সে থাকবে পরিপূর্ণ একাডেমিক কার্যক্রম। থাকবে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ছাড়াও পুরুষ ও নারী জাতীয় দলের অনুশীলন সুবিধা। ফিটনেস ট্রেইনার, রেফারিজ, কোচেস এবং অন্যান্য টেকনক্যিাল কার্যক্রম পরিচালিত হবে এ কমপ্লেক্সে। বরাদ্দকৃত গোপালগঞ্জ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে রয়েছে ইনডোর জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল, হোস্টেল, দুটি খেলার মাঠ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুরো কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর শুরু করা হবে প্রস্তাবিত কাবাডি কমপ্লেক্স।'