ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে টেবিল টেনিস মিশ্র বিভাগে বাংলাদেশ দলের পক্ষে রৌপ্য পদক জয়ী খৈ খৈ মারমা ও জাভেদ আহমেদকে সংবর্ধনা ও আর্থিক পুরস্কার দিল বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দুই পদক জয়ী খেলোয়াড় সাফল্যের গল্প, সম্ভাবনা ও চাহিদার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ সনেটও পরিকল্পনা ও সংকটের চিত্র তুলে ধরেছেন। সাবেক টিটি খেলোয়াড় ও বিকেএসপির কোচ মোস্তফা বিল্লাহ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে টিটির সঙ্গে জড়িত মোস্তফা খৈ খৈ ও জাভেদের অর্জনকে ঐতিহাসিক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের ৫৩ বছর বয়সে এত বড় রেজাল্ট কখনো আসেনি। খেলোয়াড়রা অত্যন্ত আন্তরিক ছিল এবং সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে। এতেই এই ফল এসেছে।’ টেবিল টেনিসে পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম সিনিয়র জাভেদ আহমেদ। গত কয়েক বছর তিনি বিভিন্ন আন্দোলন ও অধিকার আদায়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন। নতুন কমিটি আসার পরও সিলেকশন না র‌্যাঙ্কিং নিয়েও বেশ সংকটময় সময় পার করেছেন জাভেদ। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের টেবিল টেনিসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্জনের পর জাভেদের প্রতিক্রিয়া, আমাদের এই অর্জন একদিনে আসেনি। বিগত দিনের পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই এই ফলাফল। দেশের হয়ে আমরা সব সময় ইতিবাচক ফলাফলের চেষ্টা করি, কখনো ক্লিক করে আবার করে না।

নারী টেবিল টেনিস মানেই গত এক দশক সোনাম সুলতানা সোমা কিংবা সাদিয়া রহমান মৌ। এই দুই জনকে ছাপিয়ে খৈ খৈ মারমা ইসলামিক গেমসে পদক জিতেছেন। তার স্বপ্নের পরিধিতে সরাসরি অলিম্পিক খেলা, ‘গত ইসলামিক গেমসে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল। এবার আমাদের লক্ষ্য ছিল অন্তত কোয়ার্টার পর্যন্ত যাওয়া এরপর সম্ভব হলে এগিয়ে যাওয়া। কোয়ার্টার প্রতিপক্ষ পাওয়ার পর জাভেদ ভাই বলল চান্স আছে। চেষ্টা করলাম হয়ে গেল। আমি চাই একদিন আমরা অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করে খেলব। হোক সেটা সিঙ্গেল, ডাবল কিংবা টিম ইভেন্টে।’ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসর অলিম্পিক। গলফার সিদ্দিকুর রহমান, আরচ্যার রোমান সানা ও সাগর ইসলাম ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনো ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। খৈ খৈ মারমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু মনে করছেন না জাভেদ আহমেদ। জাতীয় দলে যারা খেলে তাদের অন্তত মাসিক বেতন বা আর্থিক আয়ের একটা নিশ্চয়তা থাকা দরকার। পরিবার বা ব্যয় নিয়ে যদি দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় তাহলে তো খেলা কঠিন।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই খেলেয়াড়দের আর্থিক স্বচ্ছলতা। ফেডারেশনের সেই সামর্থ্য নেই, এজন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, অলিম্পিক ও সরকার এবং অন্য স্পন্সরদের সহায়তা প্রয়োজন। জাভেদ ও খৈ খৈ’য়ের এই সাফল্যের পর আশা করি তারা টেবিল টেনিসের প্রতি আরও আগ্রহী হবেন। আমরা ইরানী ও ভারতীয় কোচের সঙ্গে আলোচনা করছি। আর্থিক কারণে খানিকটা চিন্তায় রয়েছি এরপরও একজন কোচ আনবই। ভেন্যুর সমস্যা রয়েছে, ডিসেম্বরে ১৫ থেকে বাকি সময় ব্যাডমিন্টন ব্যবহার করবে। ফলে তখন কোনো খেলা করা যাবে না।’ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অনুশীলন ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ হয়েছে কয়েকটি। যদিও অ্যাডহক কমিটির প্রধান কাজ দ্রুত সময়ে নির্বাচন আয়োজন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সম্প্রতি সকল ফেডারেশনকে (ফুটবল, ক্রিকেট বাদে) নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার চিঠি নিয়েছে। এ নিয়ে টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, ‘বিগত কয়েক বছর লিগ ও ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশীপ হয়নি। এই দু’টো প্রতিযোগিতা আয়োজন করব দ্রুত সময়ের মধ্যে। এরপর নির্বাচনের উদ্যোগ নেব।’ অলিম্পিক, এশিয়ান কিংবা কমনওয়েলথের মতো বড় ও অধিক মর্যাদাপূর্ণ গেমস না হলেও ইসলামিক গেমসও গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্রীড়া আসর। সেই গেমসে বাংলাদেশ রৌপ্য পদক পেয়েছে যা টিটিতো বটেই, ক্রীড়াঙ্গনেরও জন্যও বড় অর্জন। সম্প্রতি এশিয়ান আরচ্যারি রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া আরচ্যারদের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ১০ লাখ করে আর্থিক পুরস্কার প্রদান করেছেন। এশিয়া কাপ খেলার সম্ভাবনা শেষ হওয়ার পরও ভারতকে হারিয়ে ফুটবল দল পেয়েছে ২ কোটি টাকার ঘোষণা। অথচ টিটির এমন সাফল্যের পরও নেই মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ঘোষণা নেই। এরপরও আশা ছাড়ছেন না ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ সনেট, ‘এনএসসি, অলিম্পিক ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কার বা সংবর্ধনা পাওয়ার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা আশাবাদী তারা টেবিল টেনিসের এই কৃতি সাফল্য অর্জনকারীদের অবশ্যই সম্মানিত করবেন।’