জাতীয় বক্সিংয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ দিনে মেয়েদের ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালের দিকেই নজর ছিল বেশি। যেখানে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের বোন আফরা খন্দকারকে হারিয়ে সোনা জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস। বিকেল সাড়ে চারটায় খেলা হলেও আগ থেকেই স্টেডিয়ামের গ্যালারী ছিল প্রায় পূর্ণ। নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল পাঁচটার একটু আগে খেলা শুরু হয়। রিংয়ে লড়াই শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যালারীতে উন্মাদনা। বিশেষ করে আফরার বাবা খন্দকার আরিফ হাসান গ্যালারী থেকেই মেয়েকে নানা নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। আফরা খেলার শুরু থেকেই ডিফেন্সিভ মুডে ছিলেন। জিনাত বারবারই আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন। এর বিপরীতে আফরা জিনাতকে সেভাবে অ্যাটাক করতে পারেননি। তিন রাউন্ডের খেলায় অনেক সময় প্রতিপক্ষ অবস্থা বেগতিক দেখে খেলা আগেই ছেড়ে দেয়। আফিদার বোন আফরা প্রতি রাউন্ডেই লড়েছেন। জিনাত-আফরা ফাইটটি মাত্র মিনিট দশেকের খেলা হলেও বক্সিং স্টেডিয়াম ছিল ভিন্ন আবহ। তিন রাউন্ড শেষে জিনাত জয়ী হন। যেটা অনুমেয় ছিল। বক্সিং ফেডারেশনের জাজদের তথ্য মতে, ৫-০ ব্যবধানেই জিনাত জয়লাভ করেছেন। পাঁচজন জাজের প্রত্যেকেই জিনাতের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাই ফলাফল ৫-০। মেয়ের হার কাছ থেকে দেখলেও বেশ খুশি আফরার বাবা খন্দকার হাসান, ‘আপনাদের নিউজেই দেখেছি জিনাতের বয়স ৩১। সেখানে আফরার ২১। আফরা তার সঙ্গে লড়াই করেছে এবং তিন রাউন্ড খেলেছে এতেই আমি খুশি।’ রিংয়ে আফরা খেললেও আলো কেড়েছে গ্যালারীতেও। নারী দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার প্রথমবার জাতীয় বক্সিং দেখতে এসেছেন। তার সঙ্গী হয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের শাহেদা আক্তার রিপা, ইয়ারজান। বোনের খেলা নিয়ে আফিদার প্রতিক্রিয়া, ‘ভালোই লাগল বক্সিং। একটু ভয় হচ্ছিল আপু যখন বেশি মার খাচ্ছিলেন।’ আমেরিকান প্রবাসী বক্সারের সঙ্গে লড়াই শেষে আফরার প্রতিক্রিয়া, ‘তার বিপক্ষে খেলা আমার জন্য ভালো অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তার অ্যাটাকিং ও মুভিং ভালো। আমি এগুলো উন্নত করার চেষ্টা করব।’ তিন রাউন্ডই ডিফেন্সিভ খেলে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল নক আউট হব না। এটা আসলে একটু লজ্জার। এজন্য শুরু থেকেই ডিফেন্স করে তিন রাউন্ড খেলেছি।’ আমেরিকান প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস বাংলাদেশের স্থানীয় বক্সারদের প্রশংসাই করলেন, ‘এরা ভালো। লড়াই করে ছেড়ে দেয় না।’ ৫২ কেজিতে নারীদের প্রতিযোগি ছিল ৬ জন। জিনাত বাই পাওয়ায় সরাসরি সেমিফাইনালে খেলেছে। সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল আসিয়া আর ফাইনালে আফরা। দুই প্রতিপক্ষ নিয়ে জিনাতের বিশ্লেষণ, ‘দুই জন দুই ধরনের বক্সার। সে (আছিয়া) অ্যাটাকিং আর আফরা ডিফেন্সিভ। দুই জনের দুই রকম স্টাইল।’ বাংলাদেশের স্থানীয় বক্সারদের চেয়ে জিনাত অনেকটাই এগিয়ে। ফলে তিনি জিতবেন এটা অনেকটাই স্বাভাবিক। এরপরও জিনাত বলেন, ‘আমি প্রতিটি ম্যাচই সব সময় গুরুত্ব দিয়ে খেলি। কোনো খেলাতেই হারতে চাই না।’ ফুটবল, ক্রিকেটের বাইরে অন্য খেলার খেলোয়াড়রা তেমন সুযোগ-সুবিধা পান না।
আমেরিকান প্রবাসী বক্সারের বিপক্ষে হেরে ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রতি সেই আক্ষেপ ঘুচানোর অনুরোধ জানিয়েছেন আফরা, ‘আমি উপদেষ্টা মহদোয়কে অনুরোধ করব আমাদের অনুশীলন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য। তাহলে আমরা আরো ভালো খেলতে পারব।’ গ্যালারীতে ছোট বোন ও বাবা-মা ছিলেন। পরিবার নিয়ে আফরা বলেন, ‘জিততে পারলে হয়তো বাবা আরো বেশি খুশি হতেন। তারা সব সময় সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে বাবা যখন দুই মেয়েকে মাঠে নিতেন তখন অনেকে সমালোচনা করলেও পিছপা হননি।’ বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী আফরা খন্দকার জাতীয় পর্যায়ে বক্সিং করেন কয়েক বছর। নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ছোট বোন আফিদা হওয়ার পরই মূলত আফরাও আলোচনায়। এ নিয়ে আফরার মন্তব্য, ‘আগে বক্সার হিসেবে চিনত এখন বাড়তি পরিচয় অধিনায়ক আফিদার বোন। এটা বাড়তি কোনো চাপ নয়।’