ম্যাক্স গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় আজ সোমবার মিরপুরে জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে শুরু হতে যাচ্ছে ৩৪তম জাতীয় সাঁতার, ডাইভিং ও ওয়াটার পোলো প্রতিযোগিতা। আগামী ২৩ অক্টোবর পর্দা নামবে প্রতিযোগিতার। এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে নারীদের ৩টি ডাইভিং ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সাঁতার যত এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ যেন সেই অনুপাতে পিছিয়ে চলছে। সময় নির্ভর খেলা সাঁতারের পদক নিষ্পত্তি হয় এখন ন্যানো সেকেন্ডে। অথচ বাংলাদেশ জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা চলছে মান্ধাতার আমলের হ্যান্ড-টাইমিংয়ের ওপর ভর করেই। ২০১৯ সালে মিরপুর জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড স্থাপন করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। সেই স্কোরবোর্ডে ত্রুটিগত সমস্যা থাকায় কয়েক কোটি টাকার সেই সম্পদ অকেজো অব¯’ায় পড়ে আছে। এ নিয়ে এনএসসিকে একাধিক চিঠি দিয়েও কোনো সুরাহা পায়নি বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন। সে জন্য প্রতি বছরই সাঁতারুদের অনুশীলন ও ঘরোয়া প্রতিযোগিতা চলে হ্যান্ডটাইমিংয়ে।এবারও প্রতিযোগিতাটি ইলেকট্রনিকস স্কোরবোর্ড ছাড়াই শুরু হ”েছ। এ উপলক্ষে রোববার দুপুরে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) ভবনের ডাচ বাংলা ব্যাংক অডিটরিয়ামে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে ইলেকট্রনিকস স্কোরবোর্ড প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্ন আসে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অন্যান্য ফেডারেশনের মতো বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনেও সংস্কারের ছোঁয়া লাগে। সে ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি আগের নির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান কত...ক উক্ত পরিষদের এডহক কমিটি নিয়োগ করা হয়। নতুন কমিটিতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ মাহবুবুর রহমান শাহীন। সংবাদ সম্মেলনে ইলেকট্রনিকস স্কোরবোর্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সম্পত্তিটা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের, সেহেতু আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর তাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। তাদের যে ঠিকাদার উনি কয়েকবার গিয়েছেন, কিš‘ কোনো খবর নাই। আমাদের ধারণা এই স্কোরবোর্ডটি এখন অচল অব¯’ায় আছে। এটা ঠিক হওয়ার কোনো চান্স নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘উনি (এনএসসি সচিব) কিছুদিন আগে আমাদের একটা প্রোগ্রামে গিয়েছিলেন।

আমরা সে কথা তুলেছি। উনি আমাদের বলেছেন যে এটা দেখবেন তাড়াতাড়ি। উনি নতুন আসছেন, হয়ত সবকিছু বুঝে উঠতে পারেননি বা দেখতে পারেননি। তাই হয়ত হাত দি”েছন না। তবে আমার ধারণা, খুব সহসাই এটি সমাধান হবে।’ এবারের জাতীয় সাঁতারের বিভাগীয় ক্রীড়া সং¯’া, জেলা ক্রীড়া সং¯’া, সুইমিং ক্লাব, বিকেএসপি, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ ও আনসারসহ প্রায় ৬৭ দলের ৫১৬ জন পুরুষ ও ৭৯ জন মহিলা সাঁতারু, ১০৫ জন টিম অফিশিয়াল ও ১২০ জন মিট অফিশিয়ালসহ সর্বমোট ৮১৬ জন অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করছে ফেডারেশন। আসন্ন এসএ গেমস সামনে রেখে প্র¯‘তি সম্পর্কে মাহবুবুর রহমান শাহীন বলেন, ‘মিশরীয় কোচের অধীনে আমাদের পুরোদমে অনুশীলন চলছে। এই কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে পেরে সাঁতারুরা অনেক উপক...ত হ”েছ। এই কোচ দীর্ঘ সময় থাকলে সাঁতার তার হারানো জায়গায় ফিরে যাবে। তার চুক্তির মেয়াদ জানুয়ারি পর্যন্ত, তবে সাঁতারের ভবিষ্যতের জন্য তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো দরকার।’

এই প্রতিযোগিতা আয়োজনে পৃষ্টপোষক প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ আর্থিক ব্যয়ভার বহন করবে। এ ছাড়াও সার্বিক সহযোগিতায় থাকবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বিকেএসপি ও সকল সার্ভিসেস টিম ব্যতিত সকল দলের সাঁতারু ও অফিশিয়ালের যাতায়াত, থাকা ও খাওয়ার খরচ বহন করবে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন। সুইমিং কমপ্লেক্সের ডরমেটরী, ক্রীড়া পল্লী-১ ও ক্রীড়া পল্লী-২ এ সাঁতারু ও অফিশিয়ালদের আবাসনের ব্যব¯’া করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড অ্যাকোয়াটিক্স এর ইভেন্ট অনুযায়ী নতুনভাবে আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো পুরুষ বিভাগের ৮০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, মহিলা বিভাগে ১৫০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, এবং ৪*১০০ মিক্সড ফ্রি স্টাইল রিলে (পুরুষ ও মহিলা) এবং ৪*১০০ মিক্সড মিডলে রিলে (পুরুষ ও মহিলা) ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে এবারই প্রথম জাতীয় পর্যায়ে মহিলাদের ৩টি ডাইভিং ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে সাঁতারে (পুরুষ-২০টি, মহিলা-২০টি, ও মিক্সড রিলে পুরুষ ও মহিলা ২টি) মোট ৪২টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। ডাইভিংয়ে ৬টির মধ্যে পুরুষ ৩টি, মহিলা ৩টি এবং ওয়াটার পোলোসহ মোট ৪৯টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জানান, বিজয়ী সাঁতারুদের স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হবে। দলগত চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে ট্রফি প্রদান করা হবে এবং সেরা হিসেবে সাঁতারু পুরুষ ও মহিলা বিভাগে ট্রফি প্রদান করা হবে। এছাড়া স্বর্ণজয়ীকে ২০০০, রৌপ্য ১০০০ ও ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্ত সাঁতারুকে ৫০০ টাকা আর্থিক পুরস্কার দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপ¯ি’ত ছিলেন সুইমিং ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নিবেদিতা দাস, কোষাধ্যক্ষ মেজর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান (অবসরপ্রাপ্ত), নৌবাহিনীর কমান্ডার আলিমুল ইসলাম এবং স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের মিডিয়া ম্যানেজার ইব্রাহিম খলিল পলাশ।