দীর্ঘ ৩৭ বছর পর আবারও ইংলিশ চ্যানেলের বিশাল জলরাশি জয় করলেন দুই বাংলাদেশি সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমুল হক হিমেল। মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) এই দুরূহ চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়ে সফলভাবে ৩৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন তারা। বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক শাহআলম গণমাধ্যমকে এই অসাধারণ অর্জনের খবর নিশ্চিত করেছেন। সাগর ও হিমেল ছয় সদস্যের একটি আন্তর্জাতিক রিলে দল-এর অংশ ছিলেন। দলের বাকি চার সদস্য ছিলেন তিন ভারতীয় ও এক মেক্সিকান সাঁতারু। স্থানীয় সময় রাত ২টা ৩০ মিনিটে ইংল্যান্ডের ডোভার থেকে যাত্রা শুরু হয় এবং ১২ ঘণ্টা ২০ মিনিটে তারা এই ঐতিহাসিক সাঁতার শেষ করেন। শেষ ধাপে পানিতে নেমে দলকে নেতৃত্ব দেন সাগর। বিশ্বব্যাপী ইংলিশ চ্যানেলকে ওপেন ওয়াটার সাঁতারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পথ হিসেবে ধরা হয়। প্রতিকূল আবহাওয়া, ঠান্ডা পানি ও প্রবল স্রোতের কারণে এটি জয় করাকে মনে করা হয় এক দুঃসাহসিক কীর্তি। ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী সাঁতারু মোশাররফ হোসেন সর্বশেষ বাংলাদেশি হিসেবে চ্যানেলটি অতিক্রম করেছিলেন। আর এই পথ পাড়ি দেওয়া প্রথম বাংলাদেশি ছিলেন কিংবদন্তি ব্রজেন দাস, যিনি ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সাঁতারু হিসেবে এই কীর্তি গড়েন। পরবর্তী সময়ে আরও ছয়বার তিনি ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন।এদিকে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জনের পর ইতিহাসে নাম লেখানো সাতারু ইংল্যান্ড থেকে কথা বলেছেন সাবেক জাতীয় সাঁতারু ও অলিম্পিয়ান মাহফিজুর রহমান সাগর।

তিনি বলেছেন, ছোটবেলা থেকে যখন ব্রজেন দাসের ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার কথা জেনেছিলাম, তখন একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। আর স্বপ্নটা তৈরি হয়েছিল নারী সাঁতারু তাহরিনা নাসরিনের সাফল্যের কারণে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এই নারী সাঁতারু ২০১৫ সালে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। তখন আমি সাঁতারে পিকফর্মে। তার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি সম্মতও হয়েছিলেন। পরে ব্যক্তিগত কারণে পারেননি। ২০২৩ সালের দিকে হিমেলকে বলি যে, আমরা দুজন ও ভারতের দুজন মিলে ইন্দো-বাংলা টিম করে চ্যানেল পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা করি। তারপর থেকে চেষ্টা করে এতদিনে সফল হয়েছি। চ্যানেল পাড়ি দেয়ার জন্য অপেক্ষার বিষয়ে বলেছেন, ইংল্যান্ডে আসার ২৬ দিন পর সাঁতারের শিডিউল পেয়েছি। অনুশীলন করেছি তিন সপ্তাহের মতো। আবহাওয়ার কারণে শিডিউল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে। র‌্যালির নিয়ম প্রসঙ্গে বলেছেন, সবাইকে এক ঘণ্টা করে সাঁতরাতে হয়। এক ঘণ্টা পর আরেকজন নামেন। সবাই বোর্ডেই থাকেন। আমি (সাগর) প্রথমে সাঁতরিয়েছি। তারপর হিমেল। এভাবে আমি সবচেয়ে বেশি তিনবার সাঁতরিয়ে ফিনিশিংয়ে ছিলাম। প্রতিকূলতার মধ্যেই পড়তে হয়েছিল চ্যানেল পাড়ি দিতে হয়েছে জানিয়ে সাগর বলেছেন, প্রথম থেকেই তো প্রতিকূলতা ছিল। তবে সমস্যা বেশি হয়েছিল, পানিতে নামার আগেই আমার বমি হয়েছিল। সবমিলিয়ে ৭-৮ বার আমার বমি হয়েছিল। কিছুটা অসুস্থ হবো বলে ধারণা ছিল। তবে বমি হবে ভাবিনি কখনো। তবে আমার একটা লক্ষ্য ছিল, পারতে হবেই। আমি সাঁতারু, যত বমিই হোক হাল ছাড়বো না। বমি বারবার হওয়ায় একটা সময় দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছিল। তবে কখনো সাহস হারাইনি। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার পর সনদ নিতে হয় ৭০ থেকে ৮০ পাউন্ড অর্থের বিনিময়ে। তবে চ্যানেল পাড়ি দেয়ার দেড়শ বছর উদযাপন উপলক্ষে এবার সবাইকে সৌজন্য পদক দেয়া হয়েছে।