কামরুজ্জামান হিরু, রিয়াদ, সৌদি আরব থেকে : সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের আল জানাদ্রিয়াহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ইসলামি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর ষষ্ঠ ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের জমকালো উদ্বোধন হয়েছে। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজ আল সৌদের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এই আসরের উদ্বোধন ঘোষণা হয় স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুক্রবার শুরু হলো ক্রীড়ার পাশাপাশি ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সংস্কৃতির দুই সপ্তাহব্যাপী এই উৎসব, যা চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত।
২০ বছর পর সৌদি মাটিতে আবারও ইসলামি একতার উৎসব ২০০৫ সালে মক্কা, মদিনা, জেদ্দা ও তাইফে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামিক সলিডারিটি গেমস। ঠিক দুই দশক পর আরও বৃহত্তর আয়োজন ও নতুন উদ্যমে সৌদি আরব আবারও বরণ করে নিল মুসলিম বিশ্বের অ্যাথলেটদের। এবারের মূল প্রতিপাদ্য — “ওয়ান নেশন”, অর্থাৎ এক জাতি, এক আদর্শ।
উদ্বোধনী মঞ্চে ছিল আলো, সঙ্গীত, আতশবাজি ও ইতিহাসের সমন্বয়—যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির চমৎকার মেলবন্ধনে ফুটে উঠেছে সৌদি সংস্কৃতি ও ইসলামি ঐক্যের প্রতীক। প্রতিটি দেশের পতাকা হাতে অ্যাথলেটদের মার্চ পাস্ট ছিল এক গর্বের দৃশ্য; দর্শকসারিতে রাজপরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রপ্রধান ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানে এনেছে রাজকীয় ঔজ্জ্বল্য।
শান্তি, বৈচিত্র্য ও ক্রীড়াসংহতির প্রতীক: ৫৭ দেশের ৩,৫০০ অ্যাথলেট অংশ নিচ্ছেন এই গেমসে, যেখানে থাকবে ২৩ টি ক্রীড়া বিভাগ — অ্যাথলেটিকস, সাঁতার, জুডো, টায়াকোয়ান্ডো, মুয়াই থাই, ৩×৩ বাস্কেটবল, ক্যামেল রেসিং থেকে শুরু করে প্যারা স্পোর্টস ইভেন্ট পর্যন্ত। আয়োজক ইসলামিক সলিডারিটি স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (ISSA) ও সৌদি আরবিয়ান অলিম্পিক অ্যান্ড প্যারালিম্পিক কমিটি, ওআইসি–এর সহযোগিতায় এই আসর আয়োজন করেছে।
সৌদি ক্রীড়ামন্ত্রী ও আইএসএসএ প্রধান প্রিন্স আবদুলআজিজ বিন তুর্কি আল ফয়সাল উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “বাদশাহ সালমানের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা যৌথ ইসলামি সহযোগিতার প্রতীক। ক্রীড়া একতার সেতুবন্ধন, যা শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক বোঝাপড়াকে জোরদার করে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “৩ হাজারেরও বেশি অ্যাথলেটকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। এই আয়োজন সৌদি আরবের সংগঠন দক্ষতা ও ইসলামি ক্রীড়া ঐক্যের উদাহরণ হয়ে থাকবে।”
চার ভেন্যু, এক দৃষ্টি: রিয়াধজুড়ে চারটি প্রধান ক্লাস্টারে হচ্ছে প্রতিযোগিতা—বুলেভার্ড এসইএফ এরিনা, আর্ট টাওয়ার, অলিম্পিক কমপ্লেক্স গ্রীন হল ও মালাজ কমব্যাট হল। পরিবেশবান্ধব আয়োজন নিশ্চিত করতে আয়োজকরা গ্রহণ করেছেন টেকসই অবকাঠামো নীতি, যা ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক গেমসের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও প্রত্যাশা: গেমসের একবার আসরে ভাল ফলাফলের প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশের ৩৬ জন অ্যাথলেটসহ মোট ৬২ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ টি ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে — সেগুলো হচ্ছে অ্যাথলেটিকস, সাঁতার, টেবিল টেনিস, কারাতে, জুডো, ওয়েট লিফটিং, রেসলিং, ফেন্সিং, তায়কোয়ানডো ও চায়নীজ মার্শাল আর্ট উশুতে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা বহনের দায়িত্ব পালন করেন ওয়েটলিফটার মাবিয়া আক্তার সিমন্ত ও টেবিল টেনিস তারকা মুহতাসিন আহমেদ। দুইজনই দেশের জন্য পদক আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বাংলাদেশ দলের প্রধান মোঃ সেলিম ফকির, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিওএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন “আমরা জানি প্রতিযোগিতা কঠিন, তবে বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এই গেমস তাদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জনের সুযোগ দেবে।”
উল্লেখ্য বাংলাদেশ অতীতে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে ৮টি পদক জিতেছিল — ১ স্বর্ণ, ৩ রৌপ্য ও ৪ ব্রোঞ্জ। এবারের লক্ষ্য অন্তত একটি নতুন স্বর্ণ পদক জয়।
আজ (শনিবার) থেকে শুরু হবে প্রতিযোগিতার মূল ধাপ। বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা প্রথম দিনেই জুডো ও সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।