১৭তম জাতীয় সামার অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা শেষ হলো রোববার। সমাপনী দিনে মূল আকর্ষণ ছিল ২০০ মিটার স্প্রিন্ট। এই ইভেন্টের ফলাফলে নাটকীয়তা হয়েছে। দ্রুততম মানবীর মতো ২০০ মিটারেও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়েছেন শিরিন আক্তার। ইমরানুর রহমান দ্রুততম মানব হতে পারলেও এই ইভেন্টে দৌড়ই শেষ করতে পারেননি। মাঝ পথে পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। ১০০ মিটার নারী স্প্রিন্টের মতো ২০০ মিটারেও অত্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শিরিন আক্তার দৌড়ের অনেক সময় পিছিয়ে ছিলেন সেনাবাহিনীর শারীফা খাতুনের চেয়ে। শেষের দিকে শিরিন আবার শারীফাকে স্পর্শ করেছিলেন। সাদা চোখে শারীফা ও শিরিনের ফিনিশিং একই সঙ্গে দেখালেও ফটোফিনিশিংয়ে দুই জনের মধ্যে পার্থক্য হয়েছে মাত্র ০.০৩ সেকেন্ড। শারীফা ২৫.২৪ সেকেন্ড নিয়ে প্রথম আর শিরিন ২৫.২৭ সেকেন্ডে দ্বিতীয়। বিকেএসপির মিম আক্তার ২৫.৮৭ টাইমিংয়ে তৃতীয়। সুমাইয়া দেওয়ান নাকি শিরিন আক্তার কে দ্রুততম মানবী এ নিয়ে ঘন্টা দু’য়েক অপেক্ষা ছিল।
সুমাইয়া শিরিনকে হারানোয় খানিকটা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন শারীফা, ‘শিরিন আপু না সুমাইয়া কে চ্যাম্পিয়ন এটা নিয়ে অপেক্ষা হয়েছে দেখেছি। সুমাইয়া যখন প্রথম হয়েছে তখন আমিও আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলাম যে আমিও পারব শিরিন আপুকে হারাতে।’ দুইশ মিটার শেষ করে শিরিন ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন। নৌবাহিনীর অ্যাথলেট ও কোচিং স্টাফরা তার শ্রুশুষায় ব্যস্ত ছিল। ১০০ মিটারের পাশাপাশি ২০০ মিটারেও শিরিনের একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল। এই বছরেই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে ফেব্রুয়ারিতে শিরিন ২০০ মিটারে ২৪.৭৪ সেকেন্ড টাইমিংয়ে প্রথম হয়েছিলেন। এবার সময় যেমন বেশি নিয়েছেন তেমনি পদকও হারিয়েছেন। শিরিনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক জিতে বেশ উচ্ছ্বসিত শারীফা, ‘অনেকবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে খেলেছি। কখনো ২০০ মিটারে প্রথম হইনি। অনেক সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছি। শিরিন আপুর সঙ্গে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। তিনি আমার চেয়ে এক স্টেপ এগিয়ে থাকতেন। এবার পেরে ভালো লাগছে।’ খুলনার মেয়ে শারীফা মূলত ৪০০ মিটার স্প্রিন্টার। এবার ৪০০ মিটারে খেলেননি। দুইশ মিটারে প্রথম হবেন এটা নিজেরও ভাবনায় ছিল না, ‘এবার ইনজুরির জন্য ৪০০ মিটার খেলা হয়নি। দুইশ মিটারে ভালো করায় সামনে ২০০ মিটারেও মনোযোগ দেব।’ খুলনার মেয়ে অ্যাথলেটিক্সে আসার গল্প বললেন এভাবে, ‘বিজেএমসির মাধ্যমে আমার অ্যাথলেটিক্সে আসা। ২০১৪ সালে প্রথম অংশগ্রহণেই ৪০০ মিটারে তৃতীয় হই। এরপর আর্মি থেকে প্রস্তাব আসে। আর্মির হয়ে অনেক জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি।’ ইংল্যান্ড প্রবাসী দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান ২০০ মিটারের শুরুটা ভালোই করেছিলেন। ৫০ মিটার দৌড়ানোর পর ট্র্যাক থেকে ছিটকে যান। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তারেক রহমান নিজের সঙ্গে নিজেই লড়েছেন অনেকটা। ২২.০৪ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে ২০০ মিটারে স্বর্ণ জেতার অভিষেক করেছেন। ইমরানের মতো অ্যাথলেট থাকা সত্ত্বেও তার প্রথম হওয়ার বিশ্বাস ছিল, ‘ইমরান ভাইয়ের স্টেপিং ভালো। আমি চেষ্টা করেছি কার্ভে জোর দিতে। তিনি পুরো দৌড়ে থাকলেও আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতাম। আমার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আত্মবিশ্বাস ছিল।’ ২০০ মিটারে নৌবাহিনীর অ্যাথলেট জহির রায়হানের শ্রেষ্ঠত্ব থাকে। জহির এবার অংশগ্রহণ করছেন না। জহিরের অনুপস্থিতিতে এই ইভেন্টে আলো কাড়লেন তারেক, ‘এবার আমি দীর্ঘমেয়াদী ট্রেনিং পেয়েছি আর্মিতে। জাতীয় প্রতিযোগিতায় ভালো করেছি, ইচ্ছে রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভালো করার।’ দিনাজপুরের সন্তান তারেক। সেখান থেকে অ্যাথলেটিক্সে আসার গল্পটা তারেকের এই রকম, ‘আমি অন্যদের মতো সাধারণ অ্যাথলেট নই। আর্মিতে আসার পরই মূলত অ্যাথলেটিক্সে এসেছি। আর্মি ইউনিটে অনেক খেলা হয়। সেখানে অ্যাথলেটিক্সে খেলি। এরপর সার্জেন্ট আজহার ও চীফ কোচ ফরিদ স্যারের মাধ্যমে এই পর্যায়ে আসতে পারলাম।’