দেশের অন্যতম সেরা সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও সাবেক জাতীয় সাঁতারু নাজমুল হক হিমেল। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন জুলাইয়ে। সারা বিশ্বের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতারুদের জন্য আলাদা একটি রোমাঞ্চ। এই চ্যানেল পাড়ি দেয়া বিশেষ এক সম্মান ও মর্যাদার। বাংলাদেশীর মধ্যে ব্রজেন দাস ও মোশাররফ হোসেন খান ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার অবশ্য আব্দুল মালেক নামে আরেক বাংলাদেশী সাঁতারুর নাম শোনা গেছে, তিনি স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছিলেন। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার জন্য স্লট পাওয়া দুষ্কর। জেলিফিস, ঠান্ডা পানি ও প্রাকৃতিক বৈরিতার পাশাপাশি ব্যয়ও অনেক। এরপরও পেশাদার ও সৌখিন সাঁতারুরা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে বিভক্ত করা ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের নেশায় মাতেন। এবার সেই রোমাঞ্চকর অভিযানে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দুই সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমুল হক হিমেল। আগামী ৭ জুলাই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যুক্তরাজ্য যাবেন এই দুই সাঁতারু। সেখানে গিয়ে অন্তত ১০ দিন অনুশীলন করবেন দুজন। এর আগে বাংলাদেশের তিন সাঁতারু ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমকারী প্রথম এশীয় ব্রজেন দাস। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে তিনি মোট ছয়বার চ্যানেলটি অতিক্রম করেন। এই চ্যানেল সবচেয়ে কম সময়ে সাঁতরে পার হওয়ার রেকর্ডও গড়েছিলেন তখন। এরপর ১৯৬৫ সালে আবদুল মালেক ও ১৯৮৭ সালে মোশাররফ হোসেন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন।
গত দুই দশকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর। ২০১২ সালে লন্ডন ও ১৬ সালে রিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কয়েক বছর ধরেই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন অলিম্পিয়ান সাঁতারু সাগর। তিনি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন হিমেলকে। যিনি বর্তমানে চীন প্রবাসী। সাঁতার অঙ্গনে অবশ্য তার খুব তারকাখ্যাতি ছিল না। সাগর ও হিমেল রিলেতে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবেন। তাদের দুই জনের সঙ্গী দুই ভারতীয় সাঁতারু ইলভিস আলী হাজারিকা ও রিমো সাহা। দুই ভারতীয় সাঁতারুর সঙ্গে রিলে করার কারণ সম্পর্কে সাগর বলেন, ‘ভারতীয় দুই সাঁতারুর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। রিলেতে তুলনামূলক ব্যয় কম।’ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে একজন সাঁতারুর প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন থেকেও তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের দুই সাঁতারু মূলত ২০২৮ সালের আগে ব্যক্তিগত কোনো স্লট পাচ্ছিলেন না। কলকাতার দুই সাঁতারুর সহযোগিতায় এই বছরে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সুযোগ মেলে তাদের। যে কারণে চার সাঁতারু মিলে একটা রিলে করবেন ইংলিশ চ্যানেলে।
অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু সেসবের জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা জানালেন হিমেল, ‘ওখানে জেলি ফিশ আছে। পানির তাপমাত্রা সেখানে ১৫ থেকে ১৯ ডিগ্রি। তবে আমি চীনে ১৯ ডিগ্রিতে সাঁতার কেটেছি। খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তবে ১৫ ডিগ্রি হলে চ্যালেঞ্জিং থাকবে।’ ইংলিশ চ্যানেলের প্রস্তুতি সম্পর্কে কিশোরগঞ্জের এই সাঁতারু বলেন, ‘প্রায় ৩৭ বছর পর ব্রজেন দাস স্যার এবং মোশাররফ হোসেন স্যারের পর আমরা দুজন বাংলাদেশী যাচ্ছি। নিঃসন্দেহে এটা একটা ব্রেকথ্রু। যা গর্বের বিষয় এবং আশা করি এখন যে প্রজন্ম আছে তারাও আমাদের থেকে অনুপ্রেরণা পাক।’ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে সাঁতারুদের ৪০-৫০ কিলোমিটার সাঁতরাতে হয়। স্রোত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ১০-১৫ ঘণ্টাও লাগে। চারজনের রিলে হওয়ায় একেক জনের ৪ ঘণ্টার বেশি পানিতে থাকতে হবে। সাগর ও হিমেলের ৩ ঘণ্টার মতো পানিতে টানা থাকার রেকর্ড রয়েছে। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার কিছু গাইডলাইন রয়েছে। সেটা ভঙ্গ হলে অকৃতকার্য হবেন সাঁতারুরা, ফলে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য ব্যয় গচ্চাই যাবে, তেমনটা হলে পুনরায় আবার নতুন স্লটের জন্য আবেদন করতে হবে।