২০২৬ সালের ২৩-৩১ জানুয়ারি পাকিস্তানে এসএ গেমসের সময়সূচি নির্ধারণ হওয়ার পর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটু আশার সঞ্চার হয়েছে। যাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিওএ ভবনে ১৭টি ব্যক্তিগত ডিসিপ্লিনের ফেডারেশনের সঙ্গে এসএ গেমস নিয়ে আলোচনা সভায় বসেছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ)। গেমসের মূল ডিসিপ্লিন অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতার। দুই ফেডারেশনই এসএ গেমসের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য বিদেশি কোচ ও ট্রেনিংয়ের সুবিধা চেয়েছে ফেডারেশনের কাছে। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেছেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সাফ অ্যাথলেটিক্সের ক্যাম্প শুরু করছি। মে মাসের পরও আমরা এই ক্যাম্পের ধারাবাহিকতা রাখতে চাই। এজন্য অলিম্পিকের সহায়তা চেয়েছি। পাশাপাশি স্প্রিন্ট ও জাম্পের জন্য বিদেশি কোচ প্রয়োজন। সেটাও অলিম্পিককে জানিয়েছি।’
২০১৬ সালে শিলং-গৌহাটি এসএ গেমসে মাহফুজা খাতুন শিলা রেকর্ডসহ দুটি স্বর্ণ জিতেছিলেন। ২০১৯ সালে সাঁতার সেই ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি। সাত বছর পর আবারও এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের প্রত্যাশা সাঁতার ফেডারেশনের নতুন কমিটির। এজন্য তারাও বিদেশি কোচের প্রয়োজন মনে করছেন বলে জানান সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন, ‘আমরা নেদারল্যান্ড, কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে কোচের বিষয়ে আলাপ করছি। আমরা নিজেরাই কোচ আনবো। অলিম্পিকের আর্থিক সহায়তা পেলে ভালো হয়।’ সাঁতার, অ্যাথলেটিক্সের মতো বক্সিং, স্কোয়াশ, ব্যাডমিন্টনসহ আরও কয়েকটি ফেডারেশন বিদেশি কোচের অর্থায়নে অলিম্পিকের সহায়তা প্রত্যাশা করছে। ২০১৯ এসএ গেমসে বাংলাদেশ রেকর্ড ১৯টি স্বর্ণ জিতেছিল। সেই সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল আরচ্যারির দশ ইভেন্টেই গোল্ড। আরচ্যারি ফেডারেশন বিদেশি কোচের অধীনে নিয়মিত অনুশীলন করে থাকে। ফেডারেশনের নতুন সাধারণ সম্পাদক তানভির আহমেদ আলো’র চাওয়া একটু ভিন্ন, ‘আমাদের বিদেশি কোচ ও অনুশীলন নিয়মিত হচ্ছে। এসএ গেমস জানুয়ারিতে। এর আগে এশিয়ান পর্যায়ে একটি টুর্নামেন্ট রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারলে আমাদের ভালো প্রস্তুতি হবে। এজন্য আমরা অলিম্পিকের সহায়তা প্রত্যাশী।’
গতবার ১০টি স্বর্ণ জেতায় আরচ্যারির প্রতি প্রত্যাশা একটু বেশিই। আসন্ন গেমসে আরচ্যারির লক্ষ্য সম্পর্কে ফেডারেশনের নতুন সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আমরা এবারও বড় সংখ্যক পদক অর্জন করতে চাই। ভারত অংশগ্রহণ করলে সেটা চ্যালেঞ্জিং হবে, এরপরও আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো।’ ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আলোচনা করেছেন বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, ট্রেনিং এন্ড ডেভলপমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব একে সরকার, উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু। সমন্বয় সভার পর বিওএ’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবিএম শেফাউল কবীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। অনেক ফেডারেশন অনুশীলন ভেন্যুর সুযোগ-সুবিধা, আবার অনেক ফেডারেশন বিদেশি কোচ ও আর্থিক সহায়তা সহায়তা চেয়েছে। ১৩ এপ্রিল বৈঠক রয়েছে দলগত ডিসিপ্লিনের ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে। ২৩ এপ্রিল বিওএ নির্বাহী কমিটির সভায় সেসব উপস্থাপন হবে।’বিওএ নির্বাহী কমিটির সভার পর গেমসের অনুশীলন ও প্রস্তুতির জন্য সরকারের কাছে একটি বাজেট চাইবে বিওএ। সেই বাজেট পাওয়া বা আশ্বাসের ভিত্তিতেই মূলত পরবর্তীতে ফেডারেশনগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুশীলন শুরুর নির্দেশনা দেবে দেশের অন্যতম ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিওএ। কয়েকটি ডিসিপ্লিন বাদে বাংলাদেশের অনেক খেলার অনুশীলন ও ক্যাম্প অর্থের পাশাপাশি জায়গার অভাবে ব্যাহত থাকে বছরের অধিকাংশ সময়।
এদিনের সভায় আমন্ত্রিত ফেডারেশনগুলোকে বিভিন্ন ইভেন্টের ওপর সম্ভাব্যতা নির্ধারণের একটি নির্দেশনা ছিল বিওএ’র। অনেক ফেডারেশন সেটা করেনি। ফলে ইভেন্ট নির্ধারণের জন্য আরও সময় লাগছে বলে জানান মহাপরিচালক, ‘আমরা ফেডারেশগুলোকে একটা ফরম্যাট দিয়েছি, সেগুলো তারা কয়েকদিনের মধ্যে পূরণ করে দেবে। তখন আরও কিছু বিষয়ে আমরা স্পষ্ট ধারণা পাব।’ বৃহস্পতিবার বিওএ’র সমন্বয় সভায় উপস্থিত থাকা ফেডারেশনগুলো হলো : সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স, আরচ্যারি, বক্সিং, স্কোয়াশ, টেবিল টেনিস, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভারত্তোলন, জুডো, শুটিং, কুস্তি, উশু, গলফ, কারাতে, ফেন্সিং ও তায়কোয়ান্দো। ১৩ এপ্রিলের দ্বিতীয় সভায় থাকবে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, কাবাডি, ভলিবল, হ্যান্ডবল, রাগবি ও বাস্কেটবল। আসন্ন এসএ গেমসে ২৮ ডিসিপ্লিনের মধ্যে বিওএ’র প্রাথমিক সিদ্ধান্ত এই ২৫ ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহণ করার। রোইং, বিলিয়ার্ড ও ট্রায়াথলনের ব্যাপারে এখনও তেমন কোনো ভাবনা নেই অলিম্পিকের।