জাতীয় অ্যাথলেটিক্স মানেই টাইমিং ও ফলাফল নিয়ে বিতর্ক। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরদিনই অর্থাৎ ১৭তম জাতীয় সামার অ্যাথলেটিক্সের উদ্বোধনী দিনেই সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটল। অন্যতম আকর্ষণীয় ইভেন্ট ১০০ মিটার নারী স্প্রিন্টে ফলাফল নিয়ে বিতর্ক ও অপেক্ষা। সুমাইয়া দেওয়ান নাকি শিরিন আক্তার কে প্রথম– এ নিয়ে প্রায় ঘণ্টা দু’য়েকের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে সকলকে । ইলেকট্রনিক টাইমিংয়ে সুমাইয়া ১২.১৯ সেকেন্ড আর শিরিন আক্তারের ১২.২১। শিরিন এই ফলাফল মানতে নারাজ। তার দাবি, ‘আমি স্পষ্টভাবে প্রথম হয়েছি। আগে ফিনিশিং করেছি। ফটোফিনিশিং দেখার অধিকার অ্যাথলেটের রয়েছে। আমি সেটা দেখতে চাই।’ শিরিন তার সংস্থা নৌবাহিনীর কোচ ও কর্মকর্তাকে নিয়ে ফটোফিনিশিংয়ের সামনে যান। সেখানে বিচারকদের পাশাপাশি ফেডারেশন সেক্রেটারি শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন। ফেডারেশন সেক্রেটারি শিরিনের উদ্দেশে বলেন, ‘আগে ফলাফল ঘোষণা হবে, কারও আপত্তি থাকলে সেটা পরবর্তীতে দেখা যাবে।’ সাধারণ সম্পাদক এমন কথা বলার পরও ফলাফল প্রকাশে ঘণ্টাখানেক লেগে যায়। ১০০ মিটার নারী স্প্রিন্টার দ্রুততম মানবীর খেতাব পান। এজন্য গণমাধ্যমের আগ্রহ অনেক। প্রায় দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা হচ্ছিল না। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে ফলাফল শিট দেখান, সেখানে ১২.১৯ সেকেন্ডে সুমাইয়াকে প্রথম এবং ১২.২১ সেকেন্ডে শিরিন আক্তারকে দ্বিতীয় দেখা যায়। ইলেকট্রনিক টাইমিংয়ে শিরিন ০.০২ সেকেন্ড পিছিয়ে। ফটোফিনিশিং সাধারণত দুইজনের একই টাইমিং হলে প্রয়োগ করা হয়। দুই জনের টাইমিংয়ে পার্থক্য হলেও ফটোফিনিশিং প্রয়োগেই সমাধান হয়েছে বলে মন্তব্য অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক এবং টেকনিক্যাল কর্মকর্তা কিতাব আলীর, ‘দশমিক শূন্য দুই ব্যবধানে একজন প্রথম, আরেকজন দ্বিতীয় হয়েছে। যা এক সেকেন্ডের একশত ভাগের দুই ভাগ। এত সূক্ষ পার্থক্য ফটোমেশিন ছাড়া সম্ভব নয়।’ বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স প্রযুক্তি নির্ভর। যেখানে বাংলাদেশ আগে হ্যান্ডটাইমিং করত, এখন ইলেকট্রনিক টাইমিং থাকলেও সেটার প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকের দৃষ্টিতে শিরিন আগে ফিনিশিং লাইনে পা স্পর্শ করেছেন। আবার অনেকে দেখেছেন সুমাইয়া চেস্ট লাইন মিট করার পরে গেছেন। তাই অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকেই কারও চোখে শিরিন, আবার কারও চোখে সুমাইয়া প্রথম। আপত্তি বা সংশয় থাকতেই পারে, ফটোফিনিশিং মেশিন থাকা সত্ত্বেও ফলাফল প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় বিরক্ত খোদ সাধারণ সম্পাদকই, ‘আপনাদের সামনেই তো বললাম ফলাফল দিতে দেরি হবে কেন? এত প্রযুক্তি ও লোকজন রয়েছে। এটা তো দ্রুতই হওয়ার কথা।’ জাতীয় ও সামার মিলিয়ে ১৬ বার দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। সুমাইয়া দেওয়ানের কাছে নিজের খেতাব হারানোটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি শিরিন। তিনি আবার ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সদস্যও হয়েছেন। কমিটির সদস্য’র বিপক্ষে সিদ্ধান্ত প্রদানে বিলম্ব বা ইতস্তত কিনা এমন প্রশ্ন উঠলে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, ‘এখানে কমিটির সদস্য বা অন্য কিছু নয়। যেটা ফলাফল সেটাই আমরা দিচ্ছি, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ।’
বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া দেওয়ান এবারই প্রথম দ্রুততম মানবী হননি। এর আগেও তার ১০০ মিটারে প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। তখনও তিনি শিরিনকেই হারিয়েছিলেন। নাজমুন নাহার বিউটির পর শিরিনই ট্র্যাকে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করছেন, কালেভদ্রে সেটা কেড়ে নেন সুমাইয়া।