লালমনিরহাট সংবাদদাতা : মুসলিম সমাজে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আত্মমর্যাদা ও ধর্মপ্রেম থেকেই তারা মসজিদ পরিচালনায় নিজেদের নিয়োজিত রাখেন, অথচ লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলায় মসজিদগুলোতে ওই ৩ গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য যোগ্য লোক নিয়োগে আগ্রহ থাকলেও তাদের ন্যায্য চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণে দেখা যায়, চরম উদাসীনতা।
সরেজমিনে, লালমনিরহাটের বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে, সময়মতো ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্রই তারা মসজিদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন। কিন্তু এর বিনিময়ে যে সম্মানী দেওয়া হয়। তা অতিসামান্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে গ্রামের অধিকাংশ মসজিদের দায়িত্ব পালনের জন্য যারা
নিযুক্ত থাকেন তারা নামমাত্র সম্মানীতে মানবেতর জীবন -যাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে বেতন-ভাতার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শহর গুলোতে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা তুলনামূলক ভাবে ভালো সম্মানী পেলেও তা অনেক সময় নিয়মিতভাবে পরিশোধ করা হয় না। অন্যদিকে, গ্রামীণ মসজিদগুলোতে তাদের সম্মানী অত্যন্ত সামান্য। যা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি শিমুলতলা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান (৫৮) জানান, তিনি গত ৩০ বছর ধরে ওই মসজিদে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ প্রতি মাসে সম্মানী হিসেবে পান মাত্র ৩ হাজার ৫ শত টাকা। পরিবারে ৫ সদস্য থাকার কারণে তার সংসার মূলত একটি ছোট চায়ের দোকানের আয়ে চলে। একই মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান (৪২) জানান,মাসিক ৫ হাজার টাকা সম্মানী পাই। বর্তমান বাজারে ওই অর্থে
সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে সম্মানী পেলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসতো।
নয়ারহাট নিদাড়িয়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ আনসার আলী (৫৬) জানান, তিনি সাপ্তাহিক মুষ্টির চাল ও মাসিক ১ হাজার ৫ শত টাকা সম্মানী পান। সঙ্গে পালন করেন পেশ ইমামের দায়িত্বও। তিনি দুঃখ করে জানান, ন্যায্য পারিশ্রমিক না পাওয়ায় সন্তানদের সঠিকভাবে লেখা- পড়া করাতে পারিনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার সাদেকনগর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও পেশ ইমাম মোহাম্মদ আখিয়ুল ইসলাম (৪৮) জানান,আমার পরিবারে ৬ সদস্য। যে বেতন পাই। তা দিয়ে জীবন চালানো দুঃসাধ্য। আমাদের কথা কেউ ভাবেন না।
একই মসজিদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদার রহমান (৭৫) বলেন, মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা কম। ফলে তেমন অনুদানও ওঠে না। মাসে যা তোলা যায়। তাই তাদের দিয়ে দেই। বিষয়টি আমাদের জন্যও কষ্টকর।
এমন অল্প সম্মানীতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় অধিকাংশ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। মসজিদ কমিটির সদস্যরাও তাদের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করেন। তাই তারা সরকারিভাবে বেতন-ভাতা চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানী নির্ধারণ করা হলে হাজারো পরিবারে স্বস্তি ফিরবে এবং তারা আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে ইসলামীক ফাউন্ডেশন লালমনিরহাটের উপপরিচালক রেজাউল করিম জানান, লালমনিরহাট জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৩ শত ২৯টি মসজিদ রয়েছে এবং নতুনভাবে গণনার কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমান বাজারে অল্প সম্মানীতে টিকে থাকা অনেকটাই কঠিন। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামীক ফাউন্ডেশনকে জানানো হয়েছে। তাদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, লালমনিরহাট জেলার যেসব মডেল মসজিদ রয়েছে। সেগুলোতে সরকারিভাবেই বেতন-ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন মসজিদগুলোর যাবতীয় সিদ্ধান্ত মসজিদ কমিটি নিয়ে থাকে। তবুও যারা উল্লেখযোগ্য, বেতন-ভাতা পান না। সে সব মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা যদি আত্মিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করেন। তাহলে বিষয়টি আমরা বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকি।